নারীদের নিয়োগে দুর্নীতি কমে!

রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান_সব ক্ষেত্রেই নারীর বেশি অংশগ্রহণ চান সবাই। কারণ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে ঘুষ নেওয়া বা দুর্নীতি করার প্রবণতা কম। কিন্তু আসলেই সেটা কতটা সত্যি? প্রচলিত এ মতের পক্ষে-বিপক্ষে আছে নানা যুক্তি-তর্ক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল মঙ্গলবার তাদের এক প্রতিবেদনে এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও নারী নেত্রীদের মত বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছে।
পেরুর রাজধানী লিমায় এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১৪ বছর আগের তুলনায় সেখানে এখন ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা অনেক কম। এ বিভাগে আড়াই হাজার নারীকর্মী নিয়োগ দেওয়ার পর এ পরিবর্তন এসেছে। জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৯৫ শতাংশের মতে নারীকর্মী নিয়োগ করার কারণেই দুর্নীতি কমেছে। দুর্নীতি কমাতে পেরুর অনুসরণে মেক্সিকোতেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে নারীকর্মী।
বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের গ্রাম পরিষদে নারীর ৩০ শতাংশ আসন নিশ্চিত করার পর থেকে দুর্নীতির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি সুপেয় পানির সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, শিক্ষা ও জনসেবা খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষশাসিত গ্রামের তুলনায় ভারতে নারীশাসিত গ্রামগুলোতে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ ২ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ২ শতাংশ কম।
ইরানের নারীবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী মেহনাজ আফখামি মনে করেন, গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন সরকার গঠনের সঙ্গে নারী নেতৃত্বের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর মতে, 'নারীরা সোচ্চার হলে তাঁরা উন্নত সরকার গঠনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।'
একই মত ইন্দোনেশিয়ার প্রথম অর্থমন্ত্রী শ্রী মুলায়ানি ইন্দ্রবতীর, তাঁর মতে 'সরকারের তৃণমূল পর্যায়ে নারীর বেশি অংশগ্রহণ সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।'
বিশ্বব্যাংকের ১৯৯৯ সালের প্রতিবেদনও একই তথ্য দিচ্ছে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর উপস্থিতি বাড়ার ফলে ১০ শতাংশ দুর্নীতি কমেছে।
তবে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক প্রচলিত ধারণায় বিশ্বাসী নন। তাঁর মতে, 'নারীরা কম দুর্নীতিপরায়ন_এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই। কারণ, রাজনীতি ও সমাজের এমন অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত জায়গা আছে, যেখানে নারীর প্রবেশের কোনো সুযোগই নেই।'
২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এক পর্যবেক্ষণে রাইস ইউনিভার্সিটি ও এমরি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখেন, পুরুষের মতো নারীরাও ঘুষ নিতে প্রস্তুত। তবে নারীরা এ ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক। পুরুষশাসিত ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষের সহায়তায় ক্ষমতা অর্জন করতে পারদর্শী। চাকরি হারানোর ভয়ে নারীরা পুরুষের দুর্নীতি নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেন না।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। তিন হাজার নারী-পুরুষের ওপর পর্যবেক্ষণ শেষে প্রতিবেদনে বলা হয়_শিক্ষার নিম্নমান, ঘরের কাজে বেশি সময় দেওয়া, পুরুষের আধিপত্যের শিকার হওয়া, আর্থিক ও সামাজিকভাবে পুরুষের ওপর নির্ভরশীল নারী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কম প্রভাব ফেলতে পারে। সূত্র : রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.