জামায়াতের হরতাল-নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে

গতকাল মঙ্গলবার জামায়াতের ডাকে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সময় এবং আগের দিন জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস ও তেল বহনকারী গাড়িসহ অর্ধশতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর জঙ্গি কায়দায় অতর্কিতে হামলা চালানো হয়েছে এবং এসব হামলায় এক ডজনেরও বেশি পুলিশ গুরুতর আহত হয়েছেন। আগের দিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করেছিল। কিন্তু নিকট অতীতে পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরকর্মীদের একের পর এক হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়া ও শতাধিক পুলিশ সদস্যকে আহত করার প্রেক্ষাপটে পুলিশ তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি এবং জামায়াতও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার তেমন কোনো চেষ্টা করেনি। তা না করে তারা দুপুরের পর পরই এক বিবৃতিতে হরতাল ডাকে এবং রাতে বিএনপি সেই হরতালের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানায়। বাহ্যত সমাবেশ করতে না দেওয়ার কারণ দেখিয়ে এই হরতাল ডাকা হলেও অনেকেই একে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত প্রয়াস হিসেবেই দেখছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি কোনো দল বা ব্যক্তিবিশেষের নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের দাবি। ১৯৭১ সালে জামায়াত যেমন মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেনি, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতের চর উল্লেখ করে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, মানবতাবিরোধী অসংখ্য অপরাধ করেছিল- আজও তারা তাদের সেই পুরনো অবস্থানেই আছে। সারা দুনিয়াতেই মানবতাবিরোধী যেকোনো অপরাধের বিচার হয়, বাংলাদেশের মানুষও চার দশক ধরে সেই বিচারের দাবি করে আসছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বিপুল জনসমর্থন পাওয়ার পেছনে এটিও ছিল একটি বড় কারণ। আজ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলাগুলোর রায় যখন অত্যাসন্ন, তখন তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং আরো নানা ধরনের চক্রান্তের মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা চলছে। আর তা করা গেলে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পুনরায় মাঠে নামানো অনেক সহজ হয়ে যাবে। সম্প্রতি সে রকম কিছু আলামতও লক্ষ করা যাচ্ছে।
এক সময়কার পাকিস্তানের এই পূর্ব অংশ বহু গুণে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের উন্নয়ন পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। এ ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আর তাই দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকা দরকার এবং আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। আমরা শান্তি চাই, সমৃদ্ধি চাই। কোনোভাবেই বর্তমান পাকিস্তানের মতো উগ্র মৌলবাদী শক্তি ও জঙ্গিদের বিচরণক্ষেত্র বানিয়ে দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে চাই না।

No comments

Powered by Blogger.