টাঙ্গাইল-৩ উপনির্বাচন- বিদ্রোহী প্রার্থীকে আ.লীগ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা by রাজীব নূর ও কামাল হোসেন

জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) উপনির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুর রহমান খানকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এ ঘোষণায় পরিস্থিতি নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। ১৮ নভেম্বর (রোববার) এই উপনির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে।


আমানুর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলামের সমর্থনে গতকাল ঘাটাইলের গণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠে আয়োজিত সর্বশেষ নির্বাচনী সমাবেশে আমানুরকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
শহিদুল ইসলামের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী শহীদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। শেখ সেলিম এই ঘোষণা দেওয়ায় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের দোদুল্যমান অংশটির নৌকার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে আর কোনো সংকট থাকবে না। এমনকি, বিএনপি-সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা ভোট দিতে যাবেন, তাঁরাও নৌকায় ভোট দিয়ে টাঙ্গাইলে সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠাকারী খান পরিবারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখবেন।
বহিষ্কারের ঘোষণা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আমানুর রহমান খান বলেন, হঠাৎ করে এই ঘোষণা দেওয়া যায় না। এর আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। এটি অগণতান্ত্রিক ও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রবিরোধী। তিনি বলেন, এ ঘোষণা দিয়ে তাঁর পক্ষে সৃষ্ট গণজোয়ার ব্যাহত করা যাবে না।
নৌকার সমর্থনে সমাবেশ: গণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠে নৌকার সমর্থনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ নেতা এস আকবর খান। সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মহিলা লীগের সভানেত্রী সাংসদ নাজমা বেগম, সাংসদ ও শিল্পী মমতাজ বেগম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খান প্রমুখ।
আমানুরের পক্ষে সমাবেশ: এই উপনির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন ছিল গতকাল। আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমানুরের পক্ষে গতকাল পাঁচটিকরি ও কদমতলীতে দুটি সমাবেশ হয়। সমাবেশে আমানুর বলেন, ‘আমি এই ঘাটাইলের সন্তান। ঘাটাইলের মানুষ জানেন শহিদুলের দুর্নীতির ফিরিস্তি, টিআর-কাবিখার কোনো চাল-গম তাঁকে টাকা না দিয়ে ছাড় করানো যায়নি।’
আমানুর কারচুপির আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘কারচুপির কথা মাথায় আনবেন না। তাহলে আমার কর্মী-সমর্থকেরা গোটা টাঙ্গাইল অচল করে দেবে।’
মিশ্র প্রতিক্রিয়া: আমানুরকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণায় শহিদুল ও আমানুরের কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ ঘোষণায় শহিদুলের সমর্থকদের উল্লসিত দেখা গেলেও আমানুরের সমর্থকদের মনোবল ভেঙে পড়েনি। শহরগোপীনপুর গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, আমানুর তো কোনো দল নিয়ে নির্বাচন করতে আসেননি। তাঁকে দলে না রাখলে কী যায় আসে? শহিদুলের কট্টর সমর্থক কান্দুলিয়া গ্রামের হায়দার আলী বলেন, দলে না রাখলে যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে তাঁরা আবার কেন দলের নাম ভাঙানোর চেষ্টা করছে? এই ঘোষণার ফলে নৌকার বিজয় আর কেউ ঠেকাতে পারবে না।
এই উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ গতকাল কোনো সমাবেশ করেননি। প্রচারণার শেষ দিনে তিনি ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।
আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে টাঙ্গাইল-৩ আসনটি শূন্য হয়।

No comments

Powered by Blogger.