প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের দড়িবাহেরচর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে। এ গ্রামের ৩৭টি পরিবারের সবাই ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে ঘরবাড়ি হারায়। সিডরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আগেই আবার আইলার ছোবলে ঘরবাড়িসহ সবকিছু ভেসে যায় পরিবারগুলোর।


বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির শিকার এ গ্রামের ৩৭টি পরিবারের মধ্যে ১৮টি পরিবার এখন কোনো রকম টিকে আছে। বাকি পরিবারগুলো বিভিন্ন এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ওপর, শহরের বস্তিতে বা অন্যের বাড়িতে ছাপরা করে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েছে।
১২ নভেম্বর সরেজমিনে কথা হয় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে। বেলা তিনটার দিকে ঘরের বাইরে গাছতলায় বসে বাঁশের ঝুড়ি তৈরি করছিলেন দুলাল মালীর (৩৬) স্ত্রী রেখা রানী (২৫)। কাজ করতে করতেই রেখা রানী কথা বলতে থাকেন। তিনি জানান, সিডরে তাঁদের ঘরসহ সব ভেসে যায়। এরপর অনেক কষ্টে নতুন একটি ঘর তোলেন তাঁরা। কিন্তু অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আইলার জলোচ্ছ্বাসে আবার ঘরটি ভেসে যায়। পরপর দুটি দুর্যোগে তাঁরা পথে বসে যান। এরপর তাঁর স্বামী এবং এক দেবর মিলে নতুন করে একটি ঘর তোলেন। এখন তাঁরা সেই ঘরেই থাকেন।
সিডরের রাতের কথা সঞ্চরণ করে ওই গ্রামের রোশনে আলী মৃধা (৬৬) বলেন, ‘হেই রাইতে মনে হইছিল আসমান ভাইঙ্গা আমাগো মাথায় পড়ছে। এক ঘণ্টার বানে আমাগো ঘরবাড়িসহ সব কিছু ভাইস্যা গ্যালো।’ আনোয়ারা বেগম (৭০) বলেন, ‘সিডরের বানে বড়জোর কারও কারও পরনের কাপড়ডা ছিল। এ ছাড়া আর কেউ কিছু বাঁচাইতে পারে নাই।’ গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ আলম (৫০) বলেন, ‘এখন সিডর, আইলা না থাকলেও আমাগো ভোগান্তির শেষ নাই। প্রত্যেক অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ে (জোয়ারে) পুরা গ্রাম পানিতে ডুবে যায়।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম জানান, সিডরে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় মোট ৫৩ হাজার ৩৮০টি পরিবার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৫০০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং বাকি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। নতুন করে ঘর তৈরি করে দিয়ে এ পর্যন্ত নয় হাজার ১০৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.