পলান সরকারের জন্য রাজ্জাকের উপহার

ছোটবেলা থেকেই আবদুর রাজ্জাকের স্বপ্ন ছিল একটি পাঠাগার গড়ার। আর্থিক অনটনের কারণে হয়নি। কিন্তু বই তাঁকে সারাক্ষণ তাড়িত করে। হাতখরচের পয়সা বাঁচিয়ে বই কেনেন। মানুষকে উপহার দেন।


বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। এটাই তাঁর নেশা। গত বৃহস্পতিবার তিনি একগাদা বই নিয়ে পলান সরকারের বাড়িতে হাজির হন। আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কালিয়াকোর গ্রামে। পাঠাগারের টানে ছুটে এসেছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামে। এখানে রাজশাহী জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পলান সরকারকে একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে পলান সরকারকে পাঠাগার করে দেওয়া হচ্ছে ২০০৯ সালে এ খবর প্রথম আলোয় পড়ে আবদুর রাজ্জাক এই পাঠাগারে কিছু বই উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। রাজ্জাক জানান, নিজের ছোট্ট একটা জুতার দোকান ছিল। একসময় পুঁজি খুইয়ে পথে বসে যান। অনেক ধার-দেনা হয়ে যায়। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে একটি পরিবহনে (বাস সার্ভিস) কাজ নেন। আর বই সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। তিনি দেশের ২০টি উপজেলায় পরিচিতজনদের কাছে চিঠি দেন। এতে তিনি পলান সরকার কীভাবে দেশের জন্য কাজ করছেন, ঘরে ঘরে বই পৌঁছে দিয়ে মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজ করছেন। আমরা কি কিছুই করতে পারি না—এসব লিখে একটি করে বই কেনার টাকা চান। বলে চলেন রাজ্জাক, ‘কারও কাছে ২০ বার মুঠোফোনে, চিঠিতে যোগাযোগ করতে হয়েছে। কেউ তিরস্কার করেছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছে। এমনকি আত্মীয়-স্বজনেরা পর্যন্ত এ নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেছে। কিন্তু দমিনি।’
অবশেষে তিনি সাড়া পান। মানুষের দেওয়া টাকায় ২৬০ খানা বই কেনেন। যাঁদের টাকায় বইগুলো কেনা হয়েছে, দাতা হিসেবে বইয়ে তাঁদের নামই লিখে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পলান সরকারের কাছ থেকে প্রতিটা বইয়ের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র লিখে নিয়েছেন এবং তাতে পলান সরকার স্বাক্ষর করেছেন। রাজ্জাক বলেন, ‘যাঁদের টাকায় বই কেনা, এই প্রাপ্তিস্বীকারপত্র তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেব।’ জানতে চাইলে পলান সরকার বলেন, ‘বইয়ের প্রতি আবদুর রাজ্জাকের ভালোবাসা দেখে আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি। বইয়ের প্রতি যাঁর এত অনুরাগ, তাঁর পাঠাগার গড়ার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকতে পারে না।’

No comments

Powered by Blogger.