জাপানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন ১৬ ডিসেম্বর

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোদা গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। দলের ভেতরে ও বাইরে অব্যাহত চাপের মুখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।


পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ভেঙে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে নোদা রাজনীতির ময়দানে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মূলত নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতেই আগাম নির্বাচনের এ ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি।
২০০৬ সালে জুনিচিরো কোইজুমির সরকারের পর রাজনৈতিক সংকটের কারণে গত ছয় বছরে দেশটিতে গড়ে একজন করে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন হয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ষষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপানের (ডিপিজে) নেতা নোদা। দায়িত্ব নিয়েই তিনি অর্থনীতি পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংকটের মুখে পড়েন।
আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গত আগস্টে নোদার প্রস্তাবিত বিক্রয়কর বৃদ্ধির একটি বিল পার্লামেন্টে পাস হয়। বিল পাসে নোদা বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সহায়তা নেন। বিলে সমর্থন দিলে শিগগির আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন_সে সময় বিরোধীদের কাছে এ অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিল পাস হলেও নোদা তাঁর অঙ্গীকার পূরণে গড়িমসি শুরু করেন। বিরোধীরাও এ ব্যাপারে তাঁর ওপর চাপ দিতে থাকে। অন্যদিকে নিজের দলের ভেতর থেকেও তাঁর নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়া হয়েছে। দলের একটি অংশ শুরু থেকেই বিক্রয়কর বৃদ্ধিসংক্রান্ত বিলের বিরোধিতা করেছে। চলতি সপ্তাহেই ডিপিজের ছয় আইনপ্রণেতা হুমকি দেন, নোদা পদত্যাগ না করলে তাঁরা পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করবেন। এর মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও আছেন। এমন অবস্থায় নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকেই বেছে নিলেন নোদা।
সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ৪০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা। গতকাল বিকেলের দিকে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ওই বৈঠকের পর নির্বাচনের দিনক্ষণের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল নোদার। যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী নির্বাচন হবে।
আগামী নির্বাচনে নোদাকে বিরোধীদলীয় নেতা শিনজো আবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, আবের দলের বেশির ভাগ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। কারণ ফুকুশিমা বিপর্যয়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ও বিক্রয়কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ডিপিজের প্রতি জনসমর্থন অনেক কমেছে। কমেছে এলডিপিরও। তবে ছোট ছোট কিছু দলের জনসমর্থন বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শেষ পর্যন্ত জোট সরকারই পেতে যাচ্ছে জাপান। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশটি সহজেই উৎরাচ্ছে না। সূত্র : বিবিসি, জাপান টাইমস, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.