সিপিসির সম্মেলন শেষ- চীনের নেতৃত্বে আসছেন শি জিনপিং

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার দলের সম্মেলন শেষ হয়েছে। এই কমিটি দলের পলিটব্যুরো, পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি (পিবিএসসি) এবং দলের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করবে। আজ বৃহস্পতিবার নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে শি জিনপিং ও তাঁর উপপ্রধান হিসেবে লি কেকিয়াং আসছেন—এটি প্রায় নিশ্চিত।


চীনের প্রেসিডেন্ট ও ১০ বছর ধরে সিপিসির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা হু জিনতাও সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে বলেন, ‘সম্মেলনে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রবীণ নেতাদের জায়গায় তরুণেরা স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।’
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে সিপিসির ১৮তম সম্মেলন শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। গতকাল সম্মেলনের শেষ দিনে অন্তত ২৩ হাজার দলীয় প্রতিনিধি গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেন। ৩৭০ সদস্যের এই কেন্দ্রীয় কমিটিই দলের পলিটব্যুরো ও পিবিএসসি এবং দলীয় প্রধান নির্বাচন করবে। দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেলে শি জিনপিংই চীনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাচ্ছেন। লি কেকিয়াং দলের উপপ্রধান হলে তিনি হবেন চীনের প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে আগামী মার্চে তাঁরা দায়িত্ব নেবেন।
আজ সকালে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও চীনের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর মূল কর্তৃপক্ষ সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে এই দায়িত্ব পালন করছেন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর জিনতাও এই দায়িত্ব ছাড়বেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। জিনতাওয়ের পূর্বসূরি জিয়াং জেমিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার পর দুই বছর সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমান পিবিএসসির নয়জন সদস্যের মধ্যে শুধু শি জিনপিং ও লি কেকিয়াংই নতুন পিবিএসসিতে স্থান পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা না হলেও সরকার এবং সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদধারীরাই এতে স্থান পাবেন এটা নিশ্চিত। তবে কমিটিতে মোট সদস্যসংখ্যার অন্তত অর্ধেক নতুন মুখ আসবে। কারণ, বর্তমান কমিটির অনেক সদস্যই অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা পেরিয়ে গেছেন।
সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রতিবছর একবার করে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে চীনের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন চূড়ান্ত করা হয়। তবে কখনো কখনো সিপিসির পলিটব্যুরো এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এমন ক্ষেত্রে পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তের পরে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, নতুন কমিটি গঠন ছাড়াও গতকাল সম্মেলনে বিদায়ী কমিটির কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনীও অনুমোদন করা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এই দুটি প্রস্তাব পাস হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিপিসির এবারের সম্মেলনে অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল। সর্বোচ্চ নেতৃত্বে পৌঁছার জন্য বিবদমান দুই পক্ষ সক্রিয় ছিল। এর একটি পক্ষে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন, অন্য পক্ষে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও। সমঝোতার ভিত্তিতে দুই পক্ষের নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান। দুই পক্ষ হলেও তারা চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন নীতিতে একমত বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। বিবিসি, এএফপি ও দ্য হিন্দু।

No comments

Powered by Blogger.