শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল ইউরোপ

জাতীয় সরকারের অব্যাহত কৃচ্ছ্রনীতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের প্রতিবাদে গোটা ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। স্পেন ও পর্তুগালে গতকাল বুধবার সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। কর্মবিরতি পালন করেছেন গ্রিস ও ইতালির শ্রমিকেরা। এই চার দেশের শ্রমিকদের এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো।


এতে বিভিন্ন দেশের শিল্প-কারখানা অচল হয়ে পড়েছে। বাতিল হয়েছে ইউরোপের সাত শতাধিক ফ্লাইট। ২৩টি দেশের প্রায় ৪০টি সংগঠন আন্দোলনে অংশ নেয়।
ইউরোপিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ডাকে নজিরবিহীন এই আন্দোলন হয়েছে। চার দেশে একযোগে ধর্মঘট পালনের ঘটনা ইউরোপে এবারই প্রথম। কনফেডারেশন দিনটি ‘লড়াই ও সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কনফেডারশনের সাধারণ সম্পাদক বার্নাদেত্তে সেগল বলেন, ‘কিছু দেশে মানুষের ক্ষোভ চূড়ায় পৌঁছেছে।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দরকার তাৎক্ষণিক সমাধান। আমরা কৃচ্ছ্রনীতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে হত্যা করতে চাই না।’
বার্নাদেত্তে সেগল ক্ষোভ প্রকাশ ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইউরোপের নেতারা জনগণের ক্ষোভের কথা না শুনে ভুল করছেন। তিনি বলেন, ‘কৃচ্ছ্রনীতি সম্পূর্ণ মৃত। এটা পরিত্যাগ করতে হবে।’
ইউরো অঞ্চলের চতুর্থ বড় অর্থনীতি স্পেনে বর্তমানে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সেখানে প্রতি চারজনের একজন বেকার। ব্যয় সংকোচনের প্রতিবাদে গত আট মাসের মধ্যে দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো গতকাল সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
স্পেনের সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়ন সিসিওওর প্রধান ইগনাসিও ফার্নান্দেজ টক্সো বলেন, ‘আমরা এমন একটি দিনের সূচনা করতে যাচ্ছি, যেটি ইউরোপের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, এটি সরকারের বেকারত্ব ও শোচনীয় নীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট।
পুলিশ মাদ্রিদের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে। সেখানে গতকাল সন্ধ্যায় শ্রমিকদের সমাবেশ হওয়ার কথা।
স্পেনের নাগরিক গৃহীনি পাকুই ওলমো বলেন, ‘আমার দুটি ছেলে। একজনে ভর্তুকি পাচ্ছে। আরেকজন গত তিন বছর ধরে ঘরে বসে আছে। এমন না যে সে কাজ করতে চায় না। আসলে কোনো কাজ নেই।’
প্রতিবেশী পর্তুগালে সব মেট্রো সার্ভিস বন্ধ ছিল। ট্রেন ও নদীতে ফেরি চলাচল ছিল না বললেই চলে। আবর্জনা সংগ্রহ কার্যক্রম ছিল প্রায় বন্ধ। হাসপাতালের কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় চিকিৎসাসেবাও ছিল কার্যত বন্ধ। দেশটির ৪০টি শহরে সমাবেশ করেছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো।
ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল সকালেই পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে পিকেটিং হয়েছে। সেখানকার গণপরিবহন ছিল দৃশ্যত অচল। অনেক স্কুল ও সরকারি কার্যালয়ও বন্ধ ছিল।
গ্রিসে গত দুই মাসের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় ধর্মঘট পালিত হলো। তবে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও ইইউ থেকে ঋণ পেতে সংস্থা দুটির শর্ত মেনে পঞ্চমবারের মতো ব্যয় সংকোচন প্যাকেজ বাস্তবায়ন করার পথে এথেন্স। চলতি সপ্তাহে দেশটির আইন প্রণেতারা এই প্যাকেজ অনুমোদনও করেছেন। এথেন্স বলছে, দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে আইএমএফ ও ইইউর তিন হাজার দেড় শ কোটি ইউরো ঋণ তাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইতালিতে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে চার ঘণ্টার। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে ধর্মঘট পালিত না হলেও শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অবস্থান নেই। তবে ইউরোপজুড়ে যে আন্দোলন চলছে তার প্রতি তাদের সংহতি আছে। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.