সংঘাতের রাজনীতি-সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হোক

রাজনীতির মাঠ হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল নতুন করে জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। কোনো কোনো জোটের পরিধি বাড়ছে। সরকারের মেয়াদ এখন শেষেরদিকে।


নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, রাজনীতির ময়দান তত বেশি সরগরম হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাংগঠনিক রাজনীতির পরিবর্তে রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতার যে প্রবণতা সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে শান্তিকামী প্রতিটি মানুষের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সংঘাতের রাজনীতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ২০০৬-০৭ সালের ১/১১-এর পূর্ববর্তী সময়ে সে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। রাজনৈতিক সংঘাত কখনো সংকট উত্তরণের পথ হতে পারে না। সংঘাত কখনো কোনো রাজনৈতিক কল্যাণ বয়ে আনেনি; বরং সংঘাতের পথ ধরে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যা কারো জন্যই মঙ্গলময় হয় না। দেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতিও কোনো মঙ্গলের ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
আমাদের দেশের রাজনীতি মূলত নির্বাচননির্ভর। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি ঠিক করে। সেদিক দিয়ে ভাবতে গেলে এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ঘর গোছানোর সময়। কারণ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মুক্ত করার দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবির সারা দেশে অনেকটাই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সংগঠন দুটির কর্মীরা যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। দেশজুড়ে জামায়াতি তাণ্ডবের শিকার হতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। কুপিয়ে আহত করার পর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাসহ পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সেই অস্ত্র দিয়ে পুলিশকেই আঘাত করা হয়েছে। পুলিশের ওপর এভাবে হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার একাধিক কারণ থাকতে পারে। একদিকে এটা হতে পারে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার কৌশল। অন্যদিকে পুলিশকে উত্ত্যক্ত করে তোলার কৌশল হিসেবে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালানো হতে পারে। যেভাবে অতর্কিতে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে, তা থেকে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জামায়াতের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি নৈতিকভাবে এই কর্মকাণ্ড সমর্থন করছে না। বিএনপি থেকে স্পষ্ট করে সেটা বলেও দেওয়া হয়েছে।
ওদিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এভাবে হঠাৎ করে সহিংসতা বেড়ে গেলে বন্ধুপ্রতিম যেকোনো দেশেরই উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু-দেশ হিসেবে এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বোধ করছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে বা সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিঘি্নত হবে উন্নয়ন। স্বাভাবিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপের মাধ্যমে সংঘাত এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, 'যারা জঙ্গিবাদ সমর্থন করে, যারা মানুষ হত্যা করে, তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না।'
তাহলে সংঘাত এড়ানোর পথ কী? একমাত্র সদিচ্ছাই পারে যেকোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতার পথ এড়িয়ে চলতে হবে। আইনের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। সরকারকে সহিষ্ণু হতে হবে। সংঘাত ও সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.