ক্যাডার কবীরকে ভাড়া করে ছাত্রদল by ফখরে আলম

যশোর এমএম কলেজ ক্যাম্পাসে গত মঙ্গলবার ছাত্রদল ক্যাডারের প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও শহরের শংকরপুর এলাকার মাদক ব্যবসায়ী কবীর প্রকাশ্যে রিভলবার উঁচিয়ে ছাত্রদলের হ্যাট্টিক গ্রুপের হয়ে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়।
তাকে আটকের অভিযান চলছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কবীরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এমএম কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল হাসান হ্যাট্টিকের পক্ষ নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। তারা অন্য যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল হক শিমুলের কর্মীদের উদ্দেশে গুলি ও বোমা হামলা চালায়। এ সময় অস্ত্রধারী শ্মশ্রুমণ্ডিত এক যুবক রিভলবার উঁচিয়ে তিনটি ফাঁকা গুলি করে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অস্ত্রসহ ওই যুবকের ছবি ছাপা হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অস্ত্রধারী ওই যুবকের নাম কবীর চৌধুরী। তার বয়স ৩৪ বছর। তার বাবার নাম কেনাই চৌধুরী। বাড়ি শহরের শংকরপুর এলাকার মুরগি ফার্মের সামনে। কবীররা তিন ভাই। তার বাবা একসময় ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান।
জানা যায়, কবীর ও তার ভাই হবি দুজনই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে তারা ট্রাকে করে যশোর থেকে ঢাকায় হেরোইন ও ফেনসিডিল পাচার করে। তাদের একটি ডাকাতদল রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যশোর, কুষ্টিয়া এলাকা ছাড়াও তারা ভারতে গিয়ে ডাকাতি করে। কবীর কয়েকবার জেল খেটেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে মারা যায় শংকরপুরকেন্দ্রিক চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য দুই ভাই হাসান ও মিজান। তাদের মৃত্যুর পর এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের দায়িত্ব নেয় কবীর ও হবি। হবিকে আটকের জন্য সম্প্রতি পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালায়। এ কারণে সে গা ঢাকা দিয়ে আছে। এলাকাবাসী জানায়, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কবীর সম্প্রতি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চার মাস আগে যশোর মেডিক্যাল কলেজের সামনে ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের ছোট ভাই ব্যবসায়ী কবীর হোসেনকে আলোচিত এই কবীর মাথায় ও গলায় গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায়। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত ওই হত্যাচেষ্টা মামলার ২ নম্বর আসামি কবীর।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি গোলাম রহমান জানান, হত্যাচেষ্টা, মাদক, বিস্ফোরক ও চাঁদাবাজির কয়েকটি মামলা কবীরের নামে রয়েছে।
জানা যায়, ২০০৩ সাল থেকে যশোর এমএম কলেজে ছাত্রদলের কোনো আহ্বায়ক নেই। বর্তমানে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল হক শিমুল ও অন্য যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল হাসান হ্যাট্টিক। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের শিমুল ও হ্যাট্টিক দুই পক্ষের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক। জেলা পর্যায়ের দুজন প্রভাবশালী নেতা এই দুই গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ক্যাম্পাসে শিমুল গ্রুপের অবস্থানের সময় গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে হ্যাট্টিক গ্রুপের পারভেজ, কাঞ্চন, রাজ্জাক, আরিফ, কবীরসহ কয়েকজন ক্যাডার অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। জানা যায়, এর মধ্যে পারভেজ ও রাজ্জাক ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত। আর কবীর বহিরাগত। ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টাকালে শিমুল গ্রুপের সদস্যরা তাদের বাধা দিলে কবীর রিভলবার উঁচিয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে।
জহুরুল হক শিমুল বলেন, 'কবীর একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সে এমএম কলেজের ছাত্র নয়। তার সঙ্গে যারা এসেছিল, তারাও বহিরাগত। আমি এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটকের দাবি জানাচ্ছি।' গতকাল দুপুরে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে হ্যাট্টিকের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ছাত্রদল জেলা কমিটির সভাপতি রবিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কবীর আমাদের সংগঠনের কেউ না। কারো ছত্রচ্ছায়ায় কবীর কলেজ ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে, সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র বলেন, 'ওই অস্ত্রধারীর নাম-ঠিকানা আমরা পেয়েছি। তাকে আটকের জন্য জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।' আজকালের মধ্যেই ওই অস্ত্রধারী আটক হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিকে ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী কবীরসহ হামলাকারীদের অবিলম্বে আটকের দাবিতে গতকাল বুধবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে।

No comments

Powered by Blogger.