পথটুকু ফুরাল না... by মীর আসলাম

‘ঘটনার মাত্র ১০ মিনিট আগেও ওর সঙ্গে কথা হয়। ভাবতেও পারিনি ১০ মিনিটের মাথায় এমন ঘটনা ঘটবে। এরপর খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করি। কিন্তু ও ধরেনি।’ কথাগুলো বলতে বলতে আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মোছেন ঝুমা দে।
নগরের একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা ঝুমার স্বামী কাজল দে ২৪ নভেম্বর বহদ্দারহাটের বাসা থেকে হাজারিগলি গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে। হাজারিগলি থেকে বহদ্দারহাট বড়জোর ২০ মিনিটের পথ। কিন্তু এই সামান্য পথটুকু আর ফুরাল না। বাড়ি ফেরার পথে বহদ্দারহাটের নির্মাণাধীন উড়াল সেতুর নিচে বসা অস্থায়ী বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানেই সেতুর গার্ডারধসে মৃত্যু হয় তাঁর।
২৫ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কাজলের লাশ শনাক্ত করে গ্রামের বাড়ি রাউজানের পশ্চিম গুজারায় নিয়ে যান তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা। কাজলের গ্রামের বাড়িতে এখন শোকের মাতম। এত কম বয়সের একজন মেধাবী পরিশ্রমী মানুষ হারিয়ে যাবেন এটা কেউ মানতে পারছেন না।
তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান গ্লোবালের কর্মকর্তা কাজলের পৈতৃক বাড়ি রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাইর গ্রামে। মৃত সুরেন্দ্র দের পাঁচ ছেলের মধ্যে চতুর্থ তিনি। পরিবার নিয়ে থাকতেন বহদ্দারহাট এলাকায় একটি ভাড়াবাসায়। গ্রামের বাড়িতে কাজলের লাশ আনার খবর শুনে দূর-দূরান্ত থেকে স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এসে ভিড় জমান। তাঁর পাশে বসে বিলাপ করছিলেন স্ত্রী ঝুমা। শেষবারের মতো দেখতে এসেছিলেন তাঁর সহকর্মীরা। নিহত কাজল দের বড় ভাই রাজকুমার দে বলেন, ‘কাজলের শরীরের ডান পাশে প্রচণ্ড আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে।’
কাজল দের আত্মীয় ঝুন্টু চৌধুরী জানান, দুর্ঘটনার আগে কাজল হাজারিগলি গিয়েছিলেন স্ত্রী ঝুমা দের জন্য ওষুধ কিনতে। বলেছিলেন সরাসরি বাসায় ফিরবেন। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর প্রচারিত হওয়ার পরও কাজল বাসায় না ফেরায় আত্মীয়স্বজনেরা দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
রাত আটটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কাজলের লাশ শনাক্ত করেন তাঁরা। রোববার বিকেলে গ্রামের বাড়ির শ্মশানে কাজল দের মরদেহ দাহ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.