কাজের সময় নিরাপত্তা দাবি-আগুন আতঙ্কে সড়কে শ্রমিক আশুলিয়ায় অবরোধ ভাঙচুর by তায়েফুর রহমান

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা গতকাল বুধবার কারখানায় কাজের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিতে সড়ক অবরোধ এবং যানবাহন ও কারখানা ভাঙচুর করে। সে সময় তারা দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের মালিকসহ আগুনের ঘটনায় দায়ী সংশ্লিষ্ট সবার ফাঁসি দাবি করে। সড়ক অবরোধের কারণে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়ক ও বিশমাইল-জিরাবো সড়কে তিন-চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫-২০টি যানবাহন ভাঙচুর করে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার জাতীয় শোক পালন ও আগের দিন সোমবার আশুলিয়ার সব কারখানায় শোক পালন উপলক্ষে দুই দিন পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। গতকাল বুধবার শিল্পাঞ্চলের সব কারখানায় সকাল ৮টার মধ্যে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আগুন আতঙ্কে নিচে নেমে আসে। তারা আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কে জড়ো হয়। হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ১০-১২ জন শ্রমিক আহত হয়। কারখানা থেকে বের হয়ে ১০-১২ হাজার শ্রমিক কাজের সময় কারখানায় তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের মালিকসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। তাদের দেখাদেখি আশপাশের কারখানাগুলোর শ্রমিকরাও কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় একে একে আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা বুধবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকালে শ্রমিকরা আশুলিয়ার ইউনিক এলাকার জাপান-বাংলা গার্মেন্ট, বেঙ্গল প্লাস্টিকসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ইট-পাটকেল ছোড়ে। তারা বেঙ্গল প্লাস্টিক কারখানার সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। ওই সময় এসে পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে তারা আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও জিরাবোসহ বেশ কয়েকটি স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। ওই সময় তারা শিল্প পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল ছোড়ে এবং জিরাবো-বিশমাইল সড়কে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশের ডিআইজি আব্দুস সালামের নেতৃত্বে কয়েক প্লাটুন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশের উপপরিচালক মোক্তার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকরা আগুনের আতঙ্কে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কে নেমে আসে। ফলে ওই রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু সময় পর আশুলিয়ার কাঠগড়ায় আজমত গ্রুপের একটি কারখানা এবং আমতলায় জেট থ্রি কম্পোজিট নিটওয়ার লিমিটেডসহ প্রায় ১৫টি কারখানায় ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পুলিশ বাধা দিতে চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ লাঠিপেটায় তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওই সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।
মোক্তার হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
এদিকে, বিক্ষোভকারীরা ওইসব কারখানার শ্রমিক নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, হামলাকারীরা শ্রমিক নামধারী বহিরাগত যুবক। তারা কারখানাগুলোতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙে এবং রাস্তায় নিয়ে অপর দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায় এবং মোটরসাইকেল দুটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজমত গ্রুপের ব্যবস্থাপক (এইচআর) নজরুল ইসলাম জানান, বহিরাগত কিছু যুবক কারখানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা কারখানার কাপড়ের গুদামে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এতে বাধা দিতে গেলে বহিরাগতরা তাঁকেসহ কারখানার পাঁচ-ছয়জনকে মারধর করে।

No comments

Powered by Blogger.