জরিমানার পরও ফসলি জমিতে তৈরি হচ্ছে ইট

ভাটায় ইট পোড়ানোর ছাড়পত্র নেই; নেই জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রও। তবু ফসলি জমিতে চলছে ইট তৈরির কাজ। অবৈধভাবে জনবসতি এলাকায় ইট পোড়ানোর দায়ে ভাটার মালিককে দুই মাস আগে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এতেও থামেননি তিনি।
এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী ইটভাটাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। মেসার্স তিশা ব্রিকস ফিল্ড নামের ইটভাটাটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সিধুচী এলাকায় অবস্থিত।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন-২০০১-এর ৩(খ)-এর ১ উপধারায় বলা আছে, ‘লাইসেন্স ব্যতীত কোন ব্যক্তি ইটের ভাটা স্থাপন করিতে পারিবেন না বা ইট প্রস্তুত বা ইট পোড়াইতে পারিবেন না।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের সিধুচী এলাকায় ইটভাটাটি নির্মাণ করেন পাশের বরুড়া উপজেলার বড়চেঙ্গাহাটা গ্রামের মাইনউদ্দিন। ভাটার আশপাশে সিধুচী, বাঁশপুর ও বড়চেঙ্গাহাটা গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষকের তিনফসলি জমি রয়েছে। শুরু থেকেই এলাকার লোকজন এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। ভাটাটি বন্ধের দাবিতে ২০ নভেম্বর এলাকাবাসী কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
জেলা প্রশাসক রেজাউল আহসান বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই ইট পোড়ানো যাবে না। তিশা ব্রিকসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন। এর আগেও তাদের চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শিগগির ওই ইটভাটার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাকা ধানের মাঠের মধ্যে জিগজ্যাগের আদলে ইটভাটাটি দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাক্টরে করে নতুন মাটি আনা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন ইট। স্থানীয় বাসিন্দা ইমান আলী, বাবুল মিয়া, মোখলেছুর রহমান ও আবদুল মমিন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ব্রিক ফিল্ড বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তিশা ব্রিকস অনুমোদন না নিয়েই ইট পোড়াচ্ছে। গত বছরও পুড়িয়েছে। জরিমানার পর এবারও পোড়াচ্ছে।
মাইনউদ্দিন বলেন, ‘২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লায় আবেদন করি। সেখান থেকে সিগন্যাল পাওয়ার পর কাজ শুরু করি। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য এলআর ফান্ডে টাকা দিয়ে আবেদন করেছি। ছয় মাস আগে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাইনি।’ অনুমোদনের আগেই ইট পোড়ানো শুরু করেছেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব ইটভাটা এভাবেই চলে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘কোনো ধরনের কাগজপত্র না থাকায় ওই ইটভাটাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে ইট উৎপাদন বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। এখন নতুন করে ইট উৎপাদন শুরু করলে আমরা ওই ভাটা বন্ধ করে দেব।’

No comments

Powered by Blogger.