অবিলম্বে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করুন- উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই

গত শনিবার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় আগুনে পুড়ে ১১১ জন শ্রমিক মারা যাওয়ার পর গত চার দিনে ঘটনাস্থলে মালিকপক্ষের কেউ না যাওয়া কেবল দুঃখজনক নয়, নিষ্ঠুরতাও।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন শোকাহত হওয়ার কারণেই সেখানে যাননি। একই সঙ্গে সংগঠনটি এই দুর্ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র থাকার কথাও বলেছে। যদি বাইরের কেউ ষড়যন্ত্র করে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লাগিয়ে থাকে, তাহলে তো মালিকের কর্তব্য ছিল, দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বজন ও সতীর্থহারা শ্রমিকদের সান্ত্বনা দেওয়া।
যেসব হতভাগ্য শ্রমিক সেদিন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, তাঁদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু যাঁরা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন, তাঁদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা দেওয়া কি মালিকের দায়িত্ব নয়? দুর্ঘটনার পর সেখানে অগ্নিনির্বাপণকাজের দায়িত্ব যাঁরা পালন করেছেন তাঁরা একবাক্যে বলেছেন, কারখানাটিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। কারখানার জরুরি সিঁড়ি ভবনের বাইরে থাকার নিয়ম থাকলেও তিনটি সিঁড়ির মুখই ছিল গুদামের ভেতরে, যে কারণে আগুন লাগার খবর শুনে শ্রমিকেরা ওপর থেকে নিচে নেমে এসেও গুদাম নামের অগ্নিকুণ্ড থেকে বের হতে পারেননি।
বিজিএমইএ ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন, তা এখনো প্রমাণিত নয়। কিন্তু কারখানাটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থায় যে মারাত্মক ত্রুটি ছিল, সেটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার। দুর্ঘটনার পর সারা দেশের মানুষ শোকে মুহ্যমান হলেও মালিকপক্ষ নির্বিকার। যাদের ত্রুটি ও অবহেলার কারণে এতগুলো মানুষ মারা গেলেন, তাদের কি কিছুই করার নেই? বিজিএমইএ নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছে। শিল্পমালিকদের সংগঠন হিসেবে তারা হয়তো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু কারখানার মালিক কী করেছেন আমরা জানি না। তাঁকে অবশ্যই নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় বহন করতে হবে।
নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি কারখানার মালিকের একটি নৈতিক দায়িত্ব আছে। তাঁরা যাতে ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন, সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা মালিককেই করতে হবে। এ ছাড়া বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের জীবিকার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নিদগ্ধ কারখানাটি চালু করতে যত সময়ই লাগুক, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। মাস শেষে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে মালিকপক্ষ যাতে কোনো টালবাহানা করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।
সবশেষে প্রত্যাশা থাকবে, তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার এ দুর্ঘটনা যেন সব তৈরি পোশাকশিল্প মালিকের জন্য সতর্কবার্তা হয়। কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং কাজের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি যেন তাঁরা ভুলে না যান।

No comments

Powered by Blogger.