বিলম্বে বোধোদয়-পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের অবসান হোক

অবশেষে দুর্নীতির গন্ধ পেল দুদক। দেশের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু পদ্মা সেতু প্রকল্পে 'ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র' খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। আদৌ ঘুষ লেনদেন হয়েছে কি না, লেনদেন হয়ে থাকলে তার পরিমাণ কত- এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও ঘুষ লেনদেনের ব্যাপারে কোথাও কোনো একটা ষড়যন্ত্র যে হয়েছে, সেটা বোধ হয় নিশ্চিত করতে চাইছে সংস্থাটি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দাতা সংস্থা দুর্নীতির অভিযোগ করেছে অনেক আগেই। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরই সে অভিযোগ উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। অন্যদিকে দাতা সংস্থার অনুদান বা ঋণ ছাড়া এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ফলে দাতা সংস্থার অভিযোগ আমলে নিতেই হয়েছে। দাতা সংস্থাও পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়েছিল। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের পাওয়া 'ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেছে' এমন তথ্য দাতা সংস্থার অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণ করে। যে প্রকল্পে এখনো অর্থায়ন হয়নি, সেখানে কেমন করে দুর্নীতি হলো, এমন প্রশ্ন অনেককেই করতে শোনা গেছে। এ অভিযোগে দাতা সংস্থার অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়া, আবার নতুন করে এগিয়ে আসা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। অনেকের ধারণা ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে কাজটি করা সম্ভব হবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্পে তেমন ঝুঁকি নেওয়ার কোনো সুযোগ বোধ হয় ছিল না। কারণ এই সেতুর ওপর কেবল দেশের মানুষের আবেগই যে কাজ করেছে তা নয়, বর্তমান সরকারের একটি নির্বাচনী অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন নির্ভর করছে এই প্রকল্পটির ওপর। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আবেগের এই সেতু নির্মাণের ওপর দেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দেওয়ার একটি সম্ভাবনা নির্ভর করছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ যখন প্রথম ওঠে, তখনই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান চালালে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আরো আগে পাওয়া যেত বলে অনেকে মনে করেন। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ হয়তো অনেক আগেই শুরু করা সম্ভব হতো। কেন দুর্নীতির ব্যাপারে আরো আগে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিলম্বে হলেও দুদকের এই অনুসন্ধান পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বড় একটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা যেতে পারে।
দুদক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছে। অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। অনুসন্ধান শেষে হয়তো জানা যাবে কারা সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার ওপর এখন নির্ভর করছে পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ। তবে এটুকু বলা যায়, পদ্মা সেতুর বিকল্প নেই। মানুষের আকাঙ্ক্ষার পারদ যে পর্যায়ে উঠেছে তাতে আগামী নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করার বিকল্প নেই। একটি উন্নয়ন প্রকল্প এখন রাজনৈতিক প্রকল্প হয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজ শুরু করা না গেলে সেটা বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে যে ব্যবহৃত হবে, তা বলাই বাহুল্য। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু ইস্যু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সরকারকে সাবধান হতে হবে। যেনতেনভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ওপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে। সরকারকে তাই এ ব্যাপারে কুশলী ও স্বচ্ছ হতে হবে। ষড়যন্ত্রের আভাস যখন দুদক পেয়েছে, তখন ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা মনে করি, দুদক এ ব্যাপারে সাহসী ভূমিকা রাখবে। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তাতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

No comments

Powered by Blogger.