৩১ মামলার আসামি মোরেলগঞ্জের পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি by হায়দার আলী

সম্প্রতি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন শেখ সাইফুল ইসলাম, যার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩১টি। এর মধ্যে খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ ১৩টি মামলা হয়েছে এ সরকারের আমলেই। বিস্ময়কর হচ্ছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এম বদিউজ্জামান সোহাগের গ্রামের বাড়ি এই উপজেলায় এবং তাঁর নির্দেশেই


সাইফুল ইসলামকে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৮ জুলাই মোরেলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে সোহাগ নিজে উপস্থিত থেকেও সাইফুলের অপকর্ম বিষয়ে কাউন্সিলরদের কথা পাত্তা দেননি। কমিটি করতে ভোটাভুটিও করতে দেওয়া হয়নি। দুই দিন পর সাইফুলকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রলীগ কমিটি।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বহু মামলার আসামিকে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি করায় দলের নেতা-কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ছাত্রলীগের এ ধরনের নেতাদের কারণে আওয়ামী লীগের সুনাম ব্যাপকভাবে নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।'
মোরেলগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল সুমন জানান ভয়াবহ তথ্য। তিনি বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতা সাইফুল ও তাঁর ক্যাডার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাইফুলের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের আমলে করা ১৩টি মামলা রয়েছে, মোট মামলা আছে ৩১টি। সাইফুল মোরেলগঞ্জের আতঙ্ক, এমন একজন ভয়ংকর লোককে ছাত্রলীগের পৌর সভাপতি করায় অনেকে বিস্মিত। সুমন জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নির্দেশেই সাইফুলকে সভাপতি করা হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ থানার ওসি মো. আসলাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ সব মামলায় সাইফুল জামিনে রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩টি মামলা হয়েছে। বিগত সময়েও তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। সাইফুলের বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জে অভিযোগের শেষ নেই।
জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই ছিল মোরেলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কাউন্সিলররা ভোট দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার আগমুহূর্তে সাইফুলকেই জোরপূর্বক উপজেলা সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে তাঁর অনুসারীরা। অবস্থা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সোহাগ কমিটি না করেই ঢাকায় চলে আসেন। পরে ৩১ জুলাই উপজেলা এবং পৌর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রলীগ।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি আরিফুজ্জামান শামীম বলেন, ৩১টি মামলার আসামিকে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি করায় ত্যাগী নেতা-কর্মীরা হতাশ এবং অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে দল ত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন। শামীম বলেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে, সেসব মামলায় সে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেবে নাকি সংগঠন চালাবে? মামলার হাজিরা দিতে দিতেই বছর চলে যাবে আর সংগঠনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।
সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'খোদার কসম আমি মানুষটা খারাপ না, যত মামলা খাইছি প্রতিহিংসার শিকার হয়ে। বর্তমান সরকারের আমলে আমার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে আর বিগত সরকারের সময় জামায়াত-জোট সরকারের রোষানলে পড়ে মামলা খেয়েছি।' ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন কমিটি না করেই ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। পরে জেলা কমিটি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়।' আপনার নির্দেশেই নাকি পৌর কমিটিতে একাধিক মামলার আসামি সাইফুলকে পৌর সভাপতি করা হয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এমন কোনো নির্দেশনা কাউকে দেওয়া হয়নি।'

No comments

Powered by Blogger.