ডিজিটাল গ্রামের একটি খ-চিত্র by সমুদ্র হক

বাঙালী নদী তীরের ছায়া ঢাকা ঘুঘু ডাকা শানত্ম একটি গ্রামের লোক আজ বুঝতে পারছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন দরকার এখনই। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, বদলে যাওয়ার যে ডাক দিয়েছে তা কতটা বাসত্মবতা অনুভব করতে পারছে তারা।


বগুড়া শহর থেকে পূর্বে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়া গ্রাম। সেই গ্রামের প্রবীণ সমাজসেবী শামসুজ্জোহা মনি জানালেন, গাঁয়ের কৃষকের, দিনমজুরেরও আজ দরকার তথ্য। দ্রত তথ্য পেলেই তারা আরও এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়ার যে পালা শুরম্ন হয়েছে তা যেন থমকে না যায়। এই গ্রামে বিদু্যত পৌঁছেছে। বিদু্যতের সঙ্গে উন্নয়নও এগিয়ে গেছে। দু'একটি বাড়ি ছাড়া প্রতিটি বাড়িতেই আছে রঙ্গিন টেলিভিশন। গ্রামের লোক কেবল লাইনে টেলিভিশনে স্যাটেলাইট চ্যানেলের অনুষ্ঠানও দেখে। কৃষক আজাহার বললেন, শীত কতটা পড়বে তাও জানা যায় খবরে, সে ভাবেই তারা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে যায়। দেশের কোথায় কি ঘটছে তা জানা যায় দ্রম্নত। এখন তাদের হাতের মুঠোয় তথ্য। কেউ কোথাও গেলে সেখানকার অবস্থাও জানতে পারে। গ্রামের প্রায় প্রত্যেকের কাছে আছে সেল (মোবাইল) ফোন। বিশ্বের কোন দেশ তাদের কাছে এখন দূরে নয়। কৃষক কুদ্দুস বললেন, আগের মতো এখন আর উঠানে বসে অযথা গালগপ্প হয় না। সকল কথার সঙ্গে থাকে যুক্তি। পাওয়ার টিলারে জমি চাষ করতে কতটা সময় লাগবে, সেই সময়ের পর বীজ কখন কিভাবে ছিটাতে হবে, চারা রোপণ করতে হবে কত দিন পর, সার ছিটাতে হবে কি পরিমাণ, সেচের জন্য কি করতে হবে সরকারীভাবে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এ সবের তথ্য এখন তারা পেয়ে যায় দ্রম্নত। এক কৃষি কর্মকর্তা বললেন, তথ্য পেয়ে কৃষক এখন সচেতন। সবই বুঝতে পারে। মোবাইল ফোনে তারা কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে যায় গ্রামে। আবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা জহুরম্নল ইসলাম জানালেন, তথ্যপ্রযুক্তি যখন এগিয়ে গেছে তখন নিজ গ্রামেই কৃষি কর্মকা-ের ধারা গড়ে তুলেছেন। কখন কোথায় কি প্রয়োজন তা তিনি কম্পিউটারে ইন্টারনেট থেকেই জেনে নেন। বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি কিভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নে গ্রামের ক'জন বললেন, টেলিভিশনের খবর শুনে তাঁরা যা জেনেছেন তাতে কৃষি, শিক্ষা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের কর্মসূচী ভাল। তবে নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা দরকার। অল্প সময়ের নোটিসে প্রাথমিক স্কুলের সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আশান্বিত করেছে। এই গ্রামের দ্বিতল সরকারী প্রাথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী। কৃষিমন্ত্রীর কথা তারা টেলিভিশনে শোনেন। কোন কর্মকর্তা তাদের ফাঁকি দিতে পারে না। তথ্যের ভা-ার প্রসারিত হলে কি হয় তা তারা বুঝতে পেরেছেন। গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা সোলায়মান বললেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহে মানুষ কতটা সচেতন হয় তা এই গ্রামের লোকদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যায়। সরকারের বর্ষপূর্তির দিনে টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জেলার লোকদের কথা প্রচার দেখে একজন বললেন, এভাবে উন্নয়নের ধারা এগিয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ লোক সরাসরি কথা বলে তাদের কথা জানাতে পারবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে গ্রামপর্যায়ে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালুর ওপর তারা জোর দেন। বিশেষ করে যে গ্রামগুলোতে বিদু্যত পেঁৗছেছে সেখানে এখনই কেউ ব্যক্তি উদ্যোগেও এ কাজটি করতে পারেন বলে এই গ্রামের লোকের মনত্মব্য। এই গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের সবাই শিক্ষিত। গ্রামের মেয়েদের অনেকে জিন্সের প্যান্ট, টি শার্ট পরে। কলেজ পড়ুয়াদের ক'জন ওয়েব সাইট ঘাটতেও পারে। একজন বলল, গুগল সার্চ করলে অনেক কিছুই জানা যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি হবে তত উন্নত হবে দেশ। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ ইফতেখারম্নল ইসলাম খান একসেস টু ইনফরমেশন বিষয়ে বলেন, বর্তমানে পৃথিবী একটি গ্রাম, দেশগুলো সব পাড়া। তথ্যের প্রবাহে এই পাড়ার দ্রম্নত উন্নয়নের সময় এসেছে। এখন দরকার দ্রম্নত তথ্যের বিকাশ ঘটানো। সরকার এই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.