লাশকাটা ঘরে হালিমা, জানে না পরিবার by জাহাঙ্গীর সুমন

হালিমার কাটা ছেড়া নিথর দেহ পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। তার পরিবারের কেউ জানেই না যে, সে আর এ পৃথিবীতে নেই। দেড় বছর আগে অভাবের তাড়নায় বাবা মোসলেম শিকদার মেয়ে হালিমাকে ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছিলেন মোটর পার্টস ব্যবসায়ী খন্দকার ইমরানের বাড়িতে।

পল্লবীর ২/২ নম্বর রোড়ের ১৫৩/৩ বাসার চতুর্থ তলার উত্তর পাশের বাসায় থাকতেন ইমরান (৪৫)। বাড়ির টুকিটাকি কাজকর্মের পাশাপাশি স্কুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি নিয়ে এসেছিলেন হালিমাকে (১২)।
রোববার সকালে গ্রেফতার হওয়ার পর এমনটায় জানালেন পল্লবী থানা হাজাতে আটক ইমরান।

ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার বানেশ্বরদী গ্রাম হালিমাকে নিয়ে আসার পর থেকেই কারণে-অকারণে মারধর করা হতো। বাসা থেকেও বের হতে দিতেন ইমরানের স্ত্রী শিউলি খন্দকার। চড়-থাপ্পড় দেওয়া ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার, মাঝে মাঝে বেধড়ক মারপিট করত। প্রতিবেশীরা জিজ্ঞেস করলে শিউলি খন্দকার তাদের জানাতেন, “মেয়েটা বেয়াদব, তাই শাসন করছি।” মাঝে মাঝে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়তো হালিমা। আর শিউলি বলতেন, “অবেলায় গোসল করায় জ্বর হয়েছে।”

শিউলি খন্দকারের প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া রফিকুল আলমের স্ত্রী শাহনাজ বেগমের কাছে এসব কথা জানা যায়।

আরেক প্রতিবেশী বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নকর্মী সুলতানা শারমিন বললেন, “মাঝে মাঝে গভীর রাতে কান্নার আওয়াজ শোনা যেত। বাড়ির দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলে জানাতো, বাসায় ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করতে চায় না, তাই অভিভাবকরা শাসন করছেন।” হালিমাকে নির্যাতন করে হত্যাকারী ব্যবসায়ী দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

শনিবার রাতে গৃহকর্ত্রী শিউলির নির্যাতনে হত্যার পর হত্যার হালিমার লাশ গুম করার চেষ্টা করা ইমরান ও দম্পতি। খন্দকার ইমরান সেহরির সময় লাশ বস্তায় ভরে বাসা থেকে বের হয়, নিরাপদ স্থানে দেওয়ার জন্য। কিছু দূর যেতেই কয়েকজন পাহারাদার তার কাছে জানতে চায়, বস্তায় কী আছে? উত্তরে ইমরান বলেন, “কিছু মোটর পার্টস আছে। দোকানে রাখতে যাচ্ছি।” এতে দারোয়ান ইয়াকুবের সন্দেহ হয়। দারোয়ানদের কোনোরকম পাশ কাটিয়ে বস্তা নিয়ে আবার বাসায় ফিরে যান ইমরান। ইমরানের কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয় ইয়াকুবসহ কয়েকজনের কাছে। পল্লবী থানায় বিষয়টি জানান তারা।

এরপর উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান ওই বাসার ইমরানের শোবার ঘর থেকে হালিমার মৃতদেহ উদ্ধার করেন। ইমরান ও শিউলিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনার পর পল্লবীর এ ব্লকের বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাদের বিচারের দাবিতে প্রায় ঘণ্টা খানেক পল্লবী থানা ঘেরাও করে রাখে। পরে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে এলাকাবাসী চলে যায়।

এসআই আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ব্যবসায়ী দম্পত্তিকে আসামি করে হত্যার পর লাশ গুমের মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার এসআই আব্দুর রহমান সরকার।

এদিকে, নিহত হালিমার মৃতদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তের পর পড়ে আছে। হালিমার মৃত্যুর খবর তার বাড়ির কেউই জানে না যে।

No comments

Powered by Blogger.