আগে দরকার চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার by বোরহান বিশ্বাস

খুব শীঘ্রই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিচারিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উপযুক্ত স্থান খোঁজা হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিচার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, বর্তমান বছর অর্থাৎ ২০১০ সাল হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বছর।


এদিকে মহাজোট সরকারের শরিক দল জাসদের প্রধান হাসানুল হক ইনুও সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, মার্চের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করতে হবে। তবে আইন প্রতিমন্ত্রীর 'চিহ্নিত রাজাকার' দের বিচারের উক্তিটি নিয়ে মৃদু কানাঘুষা চলছে। তিনি বলেছেন, "সরকার শুধু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। হাজার হাজার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে না। যাদের বিচার করা হবে তাদেরকে আমরা চিনি, আপনারাও চেনেন।" আইন প্রতিমন্ত্রীর কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায়_ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনেকেই জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে ১৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়ায় যে ১২ জনের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে তাদের সবার অপকর্মের বিষয়েই জনগণ দীর্ঘদিন যাবত অবহিত ছিল। এদের কেউ কেউ স্বঘোষিত খুনীও ছিল। বিশালাকারে অঞ্চলভিত্তিক রাজাকার খুঁজে বের করে বিচার করতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। যা বর্তমান সরকারের শাসনামলে শেষ নাও হতে পারে। আর আওয়ামী লীগের শাসনামলে যদি এই বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা না যায় এবং বিএনপি পুনরায় ক্ষমতাসীন হয় তাহলে পরবতর্ী সময় যে কি রকম ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা অকল্পনীয়। তা ছাড়া, অঞ্চলভিত্তিক বিচার কাজ করতে গেলে হট্টগোল বেধে যাওয়ারও একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। যা থেকে যুদ্ধাপরাধীরা ফায়দা লুটতে পারে। এ পন্থায় না গিয়ে সরকার যদি চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ( গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী, কাদের মোল্লাসহ যারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ) যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন যাদের অপকর্মের কথা এখনও লোকমুখে ফেরে তাদের বিচার প্রক্রিয়াটি আগে নি্#৬৩৭৪৩;ন্ন করে পরবতর্ী সময় অঞ্চলভিত্তিক বিচার কাজ শুরু করা যেতে পারে।
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পাকিস্তান ইতোমধ্যে তাদের মিশন শুরু করে দিয়েছে। সৌদি আরবও বসে নেই। আর যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তারা তো ভোল পাল্টে মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কৃত করে জাতে ওঠার চেষ্টা করছে। নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বানানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। বেশ কয়েকটি ইসু্য নিয়ে তারা বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার পর সব ধরনের মৃতু্যদণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখন অনেকটা এগিয়ে গেছে। দেশের আপামর মানুষের সঙ্গে যখন শহীদ পরিবারগুলোও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চরম পর্যায়টি দেখার জন্য অপেক্ষমান ঠিক সেই মুহূর্তে মৃতু্যদণ্ড নিয়ে তার এ জাতীয় মন্তব্য নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে বৈকি! এসব ছোটখাটো প্রচেষ্টার পাশাপাশি জামায়াতের মিত্র বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার সাহায্যকারী হিসেবে যে কোন মূল্যে জামায়াতকে সঙ্গে রাখতে চাইবে। এজন্য ভোটের অঙ্ক কষে তারা পরোক্ষভাবে যে কোন আন্দোলনের কর্মসূচীও দিতে পারে। রাজপথ সরগরম করে তুলতে পারে। যার প্রভাব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে_ চোরাগোপ্তা হামলা। জামায়াতের প্রশিক্ষণ দেয়া শিবির বাহিনীর কমর্ীরা হয়ত সে রকম কোন অঘটন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালাতে পারে। এসবই ভাবি সময়ের ভাবনা। আগামীর চিন্তা। তবে, যে জনশক্তির রায় নিয়ে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তা যে তারা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে বিচক্ষণতা দেখিয়ে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সমাপ্ত করেছে আশা করি একইভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তারা করতে সক্ষম হবে।

No comments

Powered by Blogger.