জলাবদ্ধতায় কুড়িগ্রামে পিছিয়ে যাচ্ছে আমন চাষ

কুড়িগ্রামে দুই দফা বন্যায় কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা কোমর বেঁধে রোপা আমন চাষে লেগে পড়েছেন। কিন্তু নিচু এলাকাগুলো জলাবদ্ধ থাকায় চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। ফলে রোপণের সময় পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে চলতি আমন মৌসুমে জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।


জেলা কৃষি সম্পসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমিতে। এ জন্য পাঁচ হাজার ৭১৭ হেক্টর বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দুই দফা বন্যায় এক হাজার ১৪৮ হেক্টরের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি, যাত্রাপুর, ভোগডাঙ্গা ও মোগলবাসা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় এখনো জলাবদ্ধ। পাঁচগাছি থেকে যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ থেকে যাত্রাপুর ইউনিয়নে যাওয়ার পথে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য জমি পানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে।
চর নওয়াবশ এলাকার কৃষক আফতার উদ্দিন জানান, জুনে এলাকার শত শত কৃষক আমনের বীজতলা তৈরি করে। হঠাৎ বন্যায় সব নষ্ট করে দেয়। একই এলাকার কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এখনো পুরো এলাকা পানিতে ডুবে আছে। পানি ধীরে ধীরে কমছে। কৃষকেরা নতুন করে উঁচু জায়গায় দেশি জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর বরাইবাড়ীর কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘হাত গুটিয়ে বসে আছি, কখন পানি নামবে। আমনের উপযুক্ত সময় চলে গেছে। এখন পানি নেমে গেলে স্থানীয় জাতের ধানের চারা লাগাতে হবে।’
আহাদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, আমন আবাদ পিছিয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কম হবে। রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, উপজেলায় এক হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এ পর্যন্ত লাগানো হয়েছে মাত্র ১০ হেক্টরে। বাকি জমিতে পানি থাকায় পড়ে আছে। পানি সরে গেলে কৃষকেরা স্থানীয় জাতের চারা লাগাবে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না-ও হতে পারে। রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল আজিজ জানান, সাত হাজার ৩৫৪ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত দেড় হাজার হেক্টরে চারা লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ও রৌমারী ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা এখন জলাবদ্ধ হয়ে আছে। নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন, উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৩৫৯ হেক্টরের মধ্যে রোপণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮৩ হেক্টরে। বাকি জমিতে পানি থাকায় আবাদ করা যাচ্ছে না। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মকবুল হোসেন প্রামাণিক জানান, জলাবদ্ধ জমিগুলো থেকে পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারা লাগাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.