দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ও অলস চোখ

যদি প্রশ্ন করি আপনার শিশু কি স্পষ্ট দেখতে পায়? তাহলে বেশিরভাগ বাবা-মা উত্তর দেবেন হঁ্যা। কারণ বাচ্চা তো কখনই চোখ সম্বন্ধে কোন অভিযোগ করেনি। এমনকি স্কুলের শিকও কখনও কিছু বলেননি। কিন্তু এমনও তো হতে পারে আপনার শিশু তার এক চোখ দিয়ে দেখে। অন্য চোখটা সে কখনই ব্যবহার করে না।


কারণ অন্য চোখে সে দেখে না। দু'চোখ মিলিয়ে সে স্বাভাবিক দেখে বলেই চোখ নিয়ে তার কোন অভিাযোগ নেই। চোখের এই অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় এমবস্নায়োপিয়া বা অলস চোখ বলে।
আমরা কিভাবে দেখি?
আমাদের চোখ অনেকটা অটো জুম ক্যামেরার মতো কাজ করে। চোখের সামনের দিকে থাকে স্বচ্ছ কর্নিয়া (যাকে আমরা চোখের মণি বলি) ও লেন্স। আর পেছনের দিকে থাকে রেটিনা। রেটিনা হলো নার্ভ বা স্নায়ু দিয়ে তৈরি আবরণ। প্রায় ১ মিলিয়ন 'কোন' ও ৪ মিলিয়ন 'রড' নামক সূক্ষ্মতন্ত্রী দ্বারা এই আবরণ তৈরি। কোন বসত্মুর প্রতিবিম্ব রেটিনাতে পড়লে তা স্নায়ুর মাধ্যমে অপটিক নার্ভ দিয়ে মসত্মিষ্কে পেঁৗছায়। মসত্মিষ্ক এই প্রতিবিম্ব বিশেস্নষণ করে আমাদের দৃশ্যমান বসত্মুটি কি তা নিরূপণ করে। আর তখনই আমরা বসত্মুটি দেখতে পাই। সুতরাং সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, চোখের পেছনে রেটিনাতে সঠিক প্রতিবিম্ব পড়া- সেই প্রতিবিম্ব অপটিক নার্ভ দিয়ে ব্রেনে পেঁৗছানো এবং মসত্মিষ্কের সেই প্রতিবিম্ব বিশেস্নষণ করার মতা থাকা এই তিনটি জিনিসের যে কোন একটির েেত্র অসুবিধা থাকলে আমরা বসত্মুটি দেখতে পাব না।
দৃষ্টি কি?
আমাদের দেখার মতাকে সহজ ভাষায় আমরা দৃষ্টিশক্তি বলতে পারি। অনেক হিসাব-নিকাশ করে বিজ্ঞানীরা দৃষ্টিশক্তি পরিমাপের উপায় বের করেছেন। 'স্নেলেন চার্ট', নামক একটি চার্টে বিভিন্ন মাপের কিছু অর সাজিয়ে রাখা হয়। তারপর নির্দিষ্ট ৬ মিটার দূরত্ব থেকে সেই অরগুলো পড়তে বলা হয়। যদি আমরা নির্দিষ্ট লাইন পর্যনত্ম পড়তে পারি তাহলে দৃষ্টিশক্তিকে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। চিকিৎসকগণ এই স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তিকে ৬/৬ এভাবে লিখে থাকেন। কেউ যদি নির্দিষ্ট লাইনের এক লাইন কম পড়তে পারেন তাহলে তার দৃষ্টিশক্তি হবে ৬/৯, এভাবে দুই লাইন কম পড়তে পারলে দৃষ্টিশক্তি হবে ৬/১২, তিন লাইন কম পড়লে ৬/১৮, আবার কেউ যদি শুধু উপরের বড় অরটি দেখতে পান তবে তার দৃষ্টিশক্তি ৬/৬০ ধরা হয়। সুতরাং ৬/৬ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী লোকের দৃষ্টিশক্তি যেমন স্বাভাবিক ধরা হয় ঠিক তেমনি ৬/৬০ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী লোকের দৃষ্টিশক্তি মনে করতে হবে খুবই ীণ। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে দেখার এই মতা বা দৃষ্টিশক্তি কি জন্ম থেকেই গড়ে ওঠে? খুব পুষ্টিকর খাদ্য খেলেই কি দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হবে? এ ব্যাপারে জানতে হলে দৃষ্টি শক্তির ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে জানা দরকার।
জন্মের পর পরই শিশুর চোখ আকারে খুব ছোট থাকে। সে তুলনায় তার চোখের লেন্স থাকে উচ্চ মতা সম্পন্ন। তার ফলে কোন বসত্মুরই স্পষ্ট প্রতিবিম্ব চোখের পেছনে রেটিনার ওপর পড়ে না। তাই জন্মের পর পরই শিশু কোন কিছুই স্পষ্ট দেখতে পায় না। ধীরে ধীরে শিশু যখন বেড়ে ওঠে, তার চোখও বড় হয় এবং এক পর্যায়ে সে স্পষ্ট দেখতে পায়। যদি আমরা ধারাবাহিকভাবে শিশুর দৃষ্টিশক্তি পরিমাপ করতাম তাহলে দেখতে পেতাম যে শিশুর দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং তা ৫ বছর বয়সে পরিপূর্ণতা লাভ করছে।
দৃষ্টিশক্তির এই ক্রমবিকাশ এভাবে হয়:
জন্মের পর : শিশু শুধুমাত্র আলো দেখতে পায়।
৩ মাস বয়সে : শিশু আলোর বিন্দুকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে।
৩ বছর বয়সে : শিশুর দৃষ্টিশক্তি থাকে ৬/১২
৪ বছর বয়সে : শিশুর দৃষ্টিশক্তি থাকে ৬/৯
৫ বছর বয়সে : শিশু স্বাভাবিক বা ৬/৬ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ৫ বছর বয়সে শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির সমপরিমাণ হওয়া উচিত। এই দৃষ্টিশক্তি শিশুর ১২ বছর বয়স পর্যনত্ম বিকশিত হতে থাকে। অর্থাৎ ১২ বছর বয়সে শিশুর যে দৃষ্টিশক্তি থাকবে বাকি জীবনের জন্য সেটাই হবে স্থায়ী দৃষ্টিশক্তি।
এখানে সবচেয়ে গুরম্ন ত্বপূর্ণ বিষয়টা হলো_ শিশুর দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশজনিত ঘাটতি শিশুর বয়স ১২ বছর অতিক্রানত্ম হলে চশমা বা অন্যকোন উপায়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে চশমা কি এবং কেন ব্যবহার করি? নিম্নে এ ব্যাপারে বিসত্মারিত আলোচনা করা হলো_
চশমা কি এবং কেন লাগে?
দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ঠিকমতো ঘটলেও অনেক সময় আমরা দৃশ্যমান বসত্মু ঠিকমতো দেখতে পাই না। কারণ হলো চোখের আকৃতি ও গঠনগত ত্রম্নটি। চোখের সামনে থেকে পেছনে পর্যনত্ম ব্যাস সাধারণত থাকে ২৩-২৪ মি.মি.। চোখের আকৃতি এর চেয়ে বড় হলে বসত্মুর প্রতিবিম্ব রেটিনাতে না পড়ে রেটিনার সামনে পড়বে। ফলে ঐ বসত্মু আমরা পরিষ্কার দেখব না। এ অবস্থাকে আমরা বলি মায়োপিয়া। এেেত্র একটা মাইনাস পাওয়ারের লেন্স দিয়ে রেটিনার ওপর প্রতিবিম্ব ফেলা হয়। অনুরূপভাবে বসত্মুর প্রতিবিম্ব রেটিনার পেছনে পড়তে পারে। এ অবস্থাকে আমরা হাইপারমেট্রোপিয়া বলি। পস্নাস পাওয়ারের লেন্স ব্যবহার করে ত্রম্নটি দূর করা হয়। এ্যাসিটিগমাটিজম নামক আর এক ধরনের ত্রম্নটি দেখা যায়। সেেেত্র সিলিন্ড্রিক্যাল পাওয়ার ব্যবহার করে ত্রম্নটি দূর করা হয়। ৪০ বছর বয়সের দিকে আমাদের বই বা খবরের কাগজ পড়তে অসুবিধা হয়। চোখের সিলিয়ারি মাংসপেশীর সংকোচন মতা হ্রাস পাবার ফলে এ রকম ঘটে। এেেত্রও আমরা পস্নাস পাওয়ারে চশমা ব্যবহার করে ত্রম্নটি দূর করি। এই অবস্থাকে বলে প্রেসবায়োপিয়া।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে চোখের আকৃতি ছোট বড় থাকার কারণে যদি বসত্মুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় না পড়ে চোখের সামনে বা পেছনে পড়ে কেবলমাত্র তখনই চশমা দিয়ে প্রতিবিম্ব ঠিকমতো রেটিনায় ফেলা হয়। ফলে আমরা বসত্মুকে ঠিকমতো দেখতে পাই। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ যদি ঠিকমতো না ঘটে এবং রোগীর বয়স যদি ১২ বছর অতিক্রম করে তবে চশমা দিয়েও দৃষ্টির উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে না।
দৃষ্টিশক্তির আরও দুটো দিক আছে : প্রথমত দুই চোখে একত্রে দেখার মতা দ্বিতীয়ত, বসত্মুর গভীরতা নিরূপণ করার মতা। দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ঘটার সাথে সাথে এ দুটো মতারও ক্রমবিকাশ ঘটে। এই পরিপূর্ণ ক্রমবিকাশ একটা জটিল স্নায়ুবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এই ক্রমবিকাশ শিশুর ১২ বছর বয়স পর্যনত্ম চলতে থাকে। শিশুর বয়স ১২ বছর পূর্ণ হলে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশও শেষ হয়। অর্থাৎ স্নায়ুবিক যোগাযোগ স্থাপন শেষ হয়। এই স্নায়ুবিক ক্রমবিকাশের পূর্বশর্ত হলো চোখের রেটিনার কেন্দ্রবিন্দু ম্যাকুলাতে বসত্মুর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব পড়তে হবে। চোখের লেন্সের অস্বচ্ছাতাই হোক বা চশমার কারণেই হোক যদি ম্যাকুলাতে সঠিক স্পষ্ট প্রতিবিম্ব না পড়ে তাহলে এই স্নায়ুবিক যোগাযোগ ঘটবে না (ফলে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ব্যাহত হবে এবং শিশু বসত্মুকে স্পষ্ট দেখতে পাবে না।
দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশের পরীামূলক প্রমাণ : বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিউবেল ও হুইসেল বিড়ালের ছোট বাচ্চার ওপর বৈজ্ঞানিক পরীা করেন। তাঁরা জন্মের পর পরই বিড়ালের বাচ্চার একটি চোখের পাতা সেলাই করে বন্ধ করে দেন, যাতে চোখের ভিতরে আলো ঢুকতে না পারে। অন্য চোখটি খোলা রাখেন যাতে চোখের পেছনে রেটিনাতে সঠিক প্রতিবিম্ব পড়তে পারে। নির্দিষ্ট সময় পর, চোখ খুলে দিলেও দেখা যায় বাচ্চাটি ঐ চোখে দেখতে পাচ্ছে না এবং মসত্মিষ্ক পরীা করে দেখা যায় ঐ চোখের সাথে মসত্মিষ্কের সংযোগগুলো ঠিকমতো বিকশিত হয়নি। বানরের বাচ্চার উপরে পরীা চালিয়েও একই ফল পাওয়া গেছে। মানুষের েেত্রও এটাই সত্যি। অর্থাৎ কোন কারণে যদি শিশুর চোখের পেছনে রেটিনাতে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব না পড়ে তাহলে তার দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ তিগ্রসত্ম হবে। এই তিগ্রসত্ম ক্রমবিকাশকে আমরা এমবস্নায়োপিয়া বা অলস চোখ বলি। এখানে একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন শিশুর বয়স ১২ বছরের আগে যদি এমবস্নায়োপিয়া বা দৃষ্টিশক্তির তিগ্রসত্ম ক্রমবিকাশ ধরা পড়ে তবে এর চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু যদি ১২ বছর অতিক্রম করে যায় তখন চিকিৎসকের আর কিছুই করার থাকে না। নিচে এমবস্নায়োপিয়া বা অলস চোখ সম্বন্ধে বিসত্মারিত বলা হলো।
এমবস্নায়োপিয়া বা অলস চোখ
শিশুর চোখের পেছনে রেটিনাতে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব না পড়ার ফলে যদি দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হয়, সেই অবস্থাকে আমরা এমবস্নায়োপিয়া বা অলস চোখ বলে থাকি। এ অবস্থায় চোখের গঠন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু চশমা দিয়েও দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো যায় না। ফলে শিশু দেখতে পায় না। বিভিন্ন কারণে এমবস্নায়োপিয়া হতে পারে। তার মধ্যে চশমার প্রয়োজনীয়তা আছে কিন্তু সময়মতো দেয়া হয়নি এটিই প্রধান। এ ছাড়া ট্যারা বা বাঁকা চোখ, জন্মগত ছানি ইত্যাদি কারণেও এমবস্নায়োপিয়া হতে পারে।
ব্যাপারটা এভাবে বোঝানো যায় (ধরম্ন ন একটি বাচ্চার এক চোখ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কিন্তু অন্য চোখে চশমার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে যে চোখে চশমার প্রয়োজন সেই চোখের পেছনে রেটিনাতে বসত্মুর প্রতিবিম্ব ঠিকমতো পড়বে না। ফলে এই চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ ঠিকমতো ঘটবে না। এ পরিস্থিতিতে বাচ্চা সাধারণত কোন অভিযোগ করে না। কারণ তার দুই চোখ খোলা রেখে দেখতে বা পড়তে কোনই অসুবিধা হয় না। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সে এক চোখে আংশিক অন্ধ হয়ে থাকছে। এ ছাড়াও দু'চোখে একত্রে দেখা এবং কোন বসত্মুর গভীরতা নিরূপণ করার মতাও ঐ শিশুর ঠিকমতো বিকাশ লাভ করবে না। যেহেতু শিশু কোন অভিযোগ করে না সেহেতু সনত্মানের বাবা-মাও ব্যাপারটা সম্বন্ধে অবগত থাকেন না। এভাবে শিশুর বয়স ১২ বছর অতিক্রানত্ম হবার পর যদি এ অবস্থা ধরাও পড়ে তখন ডাক্তারের প েচশমা বা অন্য কোন উপায়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় আমরা বলি শিশুটির একটি চোখ অলস বা এমবস্নায়োপিয়া। এ অবস্থা দুচোখেও হতে পারে। তবে আসল কথা হলো ১২ বছর বয়সের পূর্বে এ রোগ ধরা পড়লে তার চিকিৎসা সম্ভব।
এমবস্নায়োপিয়া রোগ নির্ণয়
অনেক েেত্র শিশুর চোখ ট্যারা বা ছানি হলে যদি ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় তখন ডাক্তার পরীা করে বুঝতে পারেন শিশুর দৃষ্টিশক্তি কতটুকু। তবে বেশিরভাগ েেত্র এমবস্নায়োপিয়া ধরা পড়ে শিশুর চোখের স্বাভাবিক পরীার সময়। একটা উদাহরণ দিলে কথাটা পরিষ্কার হবে। কিছুদিন আগে আমার কাছে অত্যনত্ম উচ্চ শিতি একজন বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি তার দুই মেয়েকে নিয়ে আসেন। বড় মেয়েটির চোখ পরীা করে বড় ধরনের কোন অস্বাভাবিকতা পাইনি। ছোট মেয়েটি সঙ্গে এসেছে। ওর চোখ নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। আমি বললাম ওর দৃষ্টিশক্তিও পরীা করে দেখি। দৃষ্টিশক্তি দেখতে গিয়ে আমি এবং ওর বাবা-মা সবাই খুব অবাক হই। কারণ ওর এক চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক (৬/৬)। কিন্তু অন্য চোখে সে প্রায় দেখতেই পায় না। (৬/৩৬)। অর্থাৎ খারাপ চোখে সে চার্টের উপরে মাত্র দুটো লাইন পড়তে পারে যেখানে ৭টি লাইন পড়তে পারা উচিত ছিল। দেখা গেল তার ঐ চোখে চশমার প্রয়োজন আছে এবং চশমার পাওয়ার,-৪। ওর ঐ চোখটা অলস বা এমবস্নায়োপিক এবং সে কারণে সে দেখতে পাচ্ছে না। পরে চশমা দিয়ে ও অন্যান্য চিকিৎসা করে তার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা হয়। এভাবেই ধরা পড়ে অলস চোখের অসত্মিত্ব।
শিশুর বয়স সাড়ে ৪ বছর হবার পরপরই প্রতিটি শিশুর চোখের দৃষ্টিশক্তি পরীা করা উচিত। যদি কম বয়সে দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি ধরা পড়ে তবে তার নিরাময় সম্ভব। সবচেয়ে ভাল হয় যদি স্কুলে প্রথম ভর্তি হবার সময় শিশুর দৃষ্টিশক্তি পরীা করা যায়। মনে রাখতে হবে স্নায়ুর সংযোগ, মসত্মিষ্কের বিকাশ এবং দৃষ্টিশক্তির পূর্ণতা প্রাপ্তি সবকিছুই ঘটে শিশুর ১২ বছর বয়সের মধ্যে। এর মধ্যে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ সবচেয়ে বেশি ঘটে ৪-৫ বছর বয়সে। এই সময়কে দৃষ্টিশক্তির ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড বলে। শিশুর ১২ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তির ক্রমবিকাশ সম্পন্ন হবার পর চোখে সঠিক অথবা ঘাটতিপূর্ণ যে দৃষ্টিশক্তিই থাকুক না কেন পরবর্তী জীবনের জন্য সেটাই হবে স্থায়ী।
অলস চোখ বা এমবস্নায়োপিয়ার চিকিৎসা
(১) চশমা
অলস চোখ নির্ণয়ের সাথে সাথে যদি চশমার প্রয়োজন হয় তবে চিকিৎসক রোগীকে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন। এই চশমা রোগীকে সারাণই পরতে হবে, এ ব্যাপারে কোন অবহেলা চলবে না।
(২) অকুশন বা প্যাচিং
এই পদ্ধতিতে ভাল চোখটিকে একটি তুলার চাকতি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় যাতে করে শিশু বাধ্য হয় অলস চোখ দিয়ে দেখতে, এই সময় শিশুকে রং করা, ছবি অাঁকা বা টিভিতে কার্টুন ছবি দেখতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। চু চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেক এই চিকিৎসা করা উচিত। কখনও দিনে এক বা দুই ঘণ্টা আবার কখনও সারাদিন প্যাচিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়। মনে রাখতে হবে যে, শিশুর চিকিৎসা ডাক্তার একা কখনই করতে পারবে না। শিশুর সব ধরনের চিকিৎসার জন্যই পিতা-মাতার সহযোগিতা একানত্ম প্রয়োজন।
(৩) ম্যাকুলার স্টিমুলেশন
এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন যান্ত্রিক উপায়ে যেমন সিনাপটোফোরের সাহায্যে বা উইু ভিজিউয়্যাল স্টিমুলেটরের সাহায্যে চোখের ম্যাকুলাকে উত্তেজিত করা হয়। ম্যাকুলা হচ্ছে রেটিনার কেন্দ্রবিন্দু। বাইরের সবকিছুর প্রতিবিম্ব ম্যাকুলাতে পড়ে বলেই আমরা তা দেখতে পাই। অলস চোখে যদিও ম্যাকুলাতে প্রতিবিম্ব পড়ে কিন্তু নার্ভ ও তার পরের সংযোগগুলো ঠিকমতো কাজ করে না বলে শিশু দেখতে পায় না। ম্যাকুলাকে স্টিমুলেট বা উত্তেজিত করতে পারলে নার্ভগুলো নিজের সংযোগ খুলে নেয়। এই চিকিৎসার কোন পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যেহেতু দৃষ্টিশক্তি খুব দ্রম্নত উন্নতি লাভ করে। এই কারণে বর্তমানে এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
(৪) অপটিক্যাল বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা
যেসব শিশু কিছুতেই প্যাচিং করতে চায় না তাদের চশমা দিয়ে বা ওষুধ দিয়ে ভাল চোখের দেখার মতাকে যথেষ্ট কমিয়ে দেয়া সাময়িক ভাবে হয়। মনে রাখতে হবে শিশুর ভালর জন্যই এটা করা হচ্ছে। ভয় পাবার কিছুই নেই। ডাক্তারের সাথে পিতামাতা ঠিকমতো সহযোগিতা করলে চিকিৎসা অনেক সহজ হবে এবং বাচ্চা চোখে দেখতে পাবে।
শেষ কথা
এমবস্নায়োপিয়া বা অলস চোখ যত কঠিন রোগই হোক না কেন সময়মতো সঠিক চিকিৎসা প্রদান করলে তার নিরাময় সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন পিতা-মাতার সচেতনতা। আমরা পিতা-মাতারা যদি শিশুর চোখের ব্যাপারে আরেকটু যত্নবান হই এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করি তবে শত শত শিশু এমবস্নায়োপিয়াসহ অন্যান্য রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে সুস্থ চোখের অধিকারী হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আসুন আমরা সকলে মিলে শিশুর চোখ বাঁচাতে এগিয়ে আসি।
ডা. নজরম্নল ইসলাম
চৰু বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল। ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.