বিক্রি বাড়াতে অভিজাত মার্কেটে র‌্যাফেল ড্রর লোভনীয় অফার- ঈদ বাজার by এম শাহজাহান

বসুন্ধরার মূল ফটক দিয়ে ঢুকলে চোখে পড়বে একটি প্রাইভেট কার। প্রাইভেটকারের পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ডিভিডি এবং ওয়াশিং মেশিনসহ বহু ইলেক্ট্রনিক পণ্য। সিটি হার্ট, কর্নফুলী গার্ডেন সিটি, টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাজা, রাইফেলস স্কয়ার, রাপা প্লাজা ও প্রিন্স প্লাজাসহ ঢাকার অভিজাত অন্যসব মার্কেটেও বসুন্ধরার মতো মূল ফটকের প্রবেশ দ্বারে এভাবে দৃষ্টিনন্দন পণ্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে।


তবে এগুলো কোনটিই বিক্রির জন্য নয়। ঈদ বাজারে ক্রেতা আকর্ষণ ও বিক্রি বাড়াতে র‌্যাফেল ড্র’র কুপনের লাখ লাখ টাকার পুরস্কার। সর্বনিম্ন ২শ’ টাকার কেনাকাটা করলেই ১টি কুপন দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও অনেক মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসে বিক্রি বাড়াতে দিচ্ছে বিশেষ ছাড় এবং নগদ টাকার পুরস্কার। ক্রেতা সাধারণ ঈদ শপিংয়ে এসে পুরস্কারের লোভে বেশি কেনাকাটা করছেন। র‌্যাফেল ড্র’র কুপনের প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ না থাকলেও তরুণ-তরুণীদের কৌতূহলের অন্ত নেই। র‌্যাফেল ড্র’র কুপন তাদের চাই-ই।
কর্নফুলী গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ঈদ শপিংয়ে এসেছেন নেহা খানম ও তাঁর তরুণী ভাগ্নি সাদিয়া ইসলাম সূচি। কেনাকাটার পর দোকানদারের দেয়া ১৫টি কুপন পেয়ে সূচি মহা খুশি। খালা নেহা খানমের অবশ্য কুপন নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। কুপন পূরণ করে জমা দেয়ার সময় এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছর ধরে তিনি ঈদ শপিং শেষে কুপন নিয়ে জমা দিচ্ছেন কিন্তু একবারও লটারীর ভাগ্য খোলেনি। এবারও হয়ত ব্যতিক্রম হবে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এটা দোকানদারদের বিক্রি বাড়ানোর কৌশল ছাড়া কিছু নয়। বেশি কুপন পেতে তাঁকে বেশি টাকার শপিং করতে হয়েছে। তবে খালার মতো আক্ষেপ বা কষ্ট নেই সূচির। সূচির প্রত্যাশা, এ বছর সে কুপনের পুরস্কার পাবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিটি হার্ট, বসুন্ধরা সিটি, রাইফেলস স্কয়ার, কনকর্ড টুইনটাওয়ার, মালিবাগ সুপার মার্কেটে দেখা গেল ক্রেতাদের ভিড়। বিভিন্ন শপিংমলও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কেনাকাটার ওপর লোভনীয় অফার, নগদ টাকার ছাড় ও পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি পুরস্কার ঘোষণা করেছে বসুন্ধরা সিটি।
এই মার্কেটের র‌্যাফেল ড্র’র কুপনে প্রথম পুরস্কার হিসেবে প্রাইভেট কার উপহার দেয়া হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে মোটরসাইকেল ও ফ্রিজ। এর পরে রয়েছে টিভি, ওয়াশিং মেশিন, ওভেনসহ ৩ শতাধিক পুরস্কার। লাখ লাখ টাকার এসব পুরস্কার লটারির মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেবে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে মার্কেটের ডরেমন কালেকশনের স্বত্বাধিকারী দিদারুল ইসলাম দিদার জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিগত কয়েক বছর ধরে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ র‌্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবার সর্বনিম্ন ২শ’ টাকার পণ্য কিনলে ১টি কুপন দেয়া হবে। তবে যত টাকার পণ্যই কেনা হোক ১০টির বেশি কুপন কাউকে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বসুন্ধরা মার্কেট কর্তৃপক্ষ বরাবরই স্বচ্ছতার সঙ্গে লটারী করে থাকে। জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে এ সংক্রান্ত সার্কুলার দিয়ে সবার সামনে ড্র অনুষ্ঠিত হয় এবং ফল পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, মূলত ক্রেতা আকর্ষণ ও বিক্রিবাট্টা বাড়াতে মার্কেট কর্তৃপক্ষ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। এছাড়াও ঈদ শপিংয়ে এসে ক্রেতারাও এ ধরনের অফার আছে কি না তা জানতে চায়। ফলে ক্রেতাদের ডিমান্ড থাকায় এ ধরনের আয়োজন না করে উপায় থাকে না।
কর্নফুলী গার্ডেন সিটি ও সিটি হার্ট মার্কেট কর্তৃপক্ষ র‌্যাফেল ড্র’র প্রথম পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল ঘোষণা করেছে। মার্কেটের মূল ফটকের সামনে সাজিয়ে রাখা মোটরসাইকেলের গায়ে লেখা হয়েছে ‘র‌্যাফেল ড্র’র প্রথম পুরস্কার।’ ফ্রিজের গায়ে লেখা হয়েছে ‘র‌্যফেল ড্র’র দ্বিতীয় পুরস্কার।’
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কেনাকাটা শেষে ক্রেতারা ভিড় করছে কুপন বক্সের সামনে। নিজের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে কুপন পূরণ করে বাক্সে ফেলা হচ্ছে। কুপন বাক্সের সামনে ভিড় দেখে বোঝা যায় কেনাকাটায় র‌্যাফেল ড্র’ বেশ প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক মার্কেটে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমির হোসন খান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ঈদ সামনে রেখে ঢাকার প্রতিটি মার্কেটের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করতে মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়া অনেক মার্কেট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনসার বাহিনী ও সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করেছে। পুলিশের কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আশা করছি ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ শপিং করতে সামর্থ্য হবেন।
এছাড়া সরেজমিনে দেখা গেছে ঈদ সামনে যানজট এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ ও মার্কেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশি সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। প্রতিটি মার্কেটের সামনে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অনেকে হেঁটেই পছন্দ মতো শপিং করতে মার্কেটে ছুটে যাচ্ছেন। রাজধানী ঢাকায় ঈদ উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবির দোকানে ভিড়। এছাড়া শিশু পোশাকের দোকানে ভিড় বাড়ছে মাদের। প্রিয় আদরের সন্তানের জন্য মা-বাবাকে যেন সবচেয়ে ভাল পোশাকটিই কিনে দিতে হবে। পা ফেলার জায়গা নেই কসমেটিক্স, গহনাগাটির দোকানেও। এসব দোকানে মহিলা ও তরুণীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ঈদের কেনাকাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সারাদিন রোজা রেখে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে কেনাকাটার আনন্দ রোজার কষ্টকে ম্লান করে দিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.