পরিবেশের সঙ্গে অসত্মিত্ব জড়িত_ জাতীয় ঐকমত্য চাই বাপা সম্মেলনে খালেদা জিয়া

পরিবেশের বিষয়টি কোন দলীয় এজেন্ডা নয়, এটা আজ জাতীয় অসত্মিত্বের সঙ্গে জড়িত। কাজেই অনত্মত এই ইসু্যতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া।


সোমবার পরিবেশ ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক তৃতীয় আনত্মর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ ইনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুইদিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মাত্র কয়েক দিন আগে কোপেনহেগেনে জলবাযু সম্মেলন হয়ে গেছে। আমাদের আশা ছিল, পরিবেশ বিপর্যয়ে সবচাইতে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই সম্মেলন থেকে ইতিবাচক কিছু পাবে। দুঃখের বিষয় আমাদের সে আশা পূর্ণ হয়নি। সম্মেলন সফল হয়নি। আমাদের সরকার বাংলাদেশের কথা ঠিকমতো তুলে ধরতে পারেনি। ফলে কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে তেমন কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। এখন আমাদের মেক্সিকোতে আগামী জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের মুখ চেয়ে বসে থাকতে হবে আরও অনত্মত একটি বছর। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সেই সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান, ঝুঁকি ও চাহিদার কথা বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরে ভাল ফল বের করে আনার জন্য আমাদের এখন থেকেই সব রকমের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ। এর জন্য বেশি দায়ী হচ্ছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। আর এতে সবচেয়ে বেশি ৰতিগ্রসত্ম হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। তাই জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নিতে হবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনত্মত আরও শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোকে আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতা একটি চুক্তিতে সই করাতে। পাশাপাশি বিপর্যয়ের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশ হিসেবে উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ৰতিপূরণ ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সহায়তা আদায়ের জন্যও আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, এ ভূমিকা বাংলাদেশ একা পালন করতে পারবে না। ঝুঁকির মধ্যে থাকা অন্যান্য দেশকেও এ ব্যাপারে সংগঠিত করতে হবে। বিশ্ব জনমতকে পৰে রাখতে হবে। আর এই প্রস্তুতি পর্বে আমাদের দেশের ভেতরে সকল দল- মতের উপরে উঠে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। এর জন্য ৰমতার দম্ভ ও দলীয় সঙ্কীর্ণতা পরিহার করা দরকার বলে মনত্মব্য করেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ৰেত্রে আমাদের নিজেদের হঠকারিতা ও ভুল ছাড়াও আঞ্চলিক ও আনত্মর্জাতিক কারণগুলোও কম দায়ী নয়। উন্নত দেশগুলো থেকে উদ্গিরিত কার্বন আগ্রাসনের শিকার হচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে প্রতিবেশী শক্তিমান রাষ্ট্র নদীর প্রবাহে বাঁধ দিয়ে আমাদের ওপর চালাচ্ছে আগ্রাসন। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- অভিযোগ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের জনগণের সব আশা-আকাঙ্ৰা ও দাবির প্রতিফলন ঘটাবে বলে আমরা আশা করি। বাংলাদেশের জনগণ নদ-নদী থেকে পানি প্রত্যাহারের একতরফা কোন প্রকল্প মেনে নিতে রাজি নয়। তিনি দৰিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিসত্মানের পারমাণবিক মারণাস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের এই প্রতিযোগিতা কেবল শানত্মির জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও এক মারাত্নক হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপার সহ- সভাপতি ড. নজরম্নল ইনলাম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. হাফিজ জি এ সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

No comments

Powered by Blogger.