আরো অনেকেই by মাকিদ হায়দার

আমি যে নির্বোধ তাহা কিছুতেই বুঝিতে পারি নাই,
অথচ, আমার রিস্টওয়াচ আমারই সঙ্গেÑ আমারই সহিতÑ।


তাহাকে কথা দিয়াছিলাম
অদ্য পাঁচ ঘটিকার মধ্যে
চন্দ্রিমা উদ্যানে দেখা হইবে, আপনি
অনুগ্রহপূর্বক যথাস্থানে
উপস্থিত হইলে
বুঝিতে পারিব,
নারীর মন সরলমতি।

আমাদের সূর্যসেন হলে গতকল্য হইতে বিদ্যুৎ নাই,
শুনিলাম, মৈত্রী হলের ছাত্রীগণ
অন্ধকারে লুকোচুরি খেলিতেছে।

ফজলুল হক হলের পূর্ব দিকের পুষ্করিণীতে
যাহারা সন্তরন শিখিতে গিয়াছিলেন তাহারা
এখনো ফিরিয়া আসেন নাই, আমি অনেক
ভাবিয়া চিন্তিয়া স্থির করিয়াছিলাম
উক্ত পুষ্করিণীতে স্নানপর্ব
শেষ করিয়া পূত পবিত্র জামা কাপড় অঙ্গে চাপাইয়া
চন্দ্রিমা উদ্যানে তাহার সহিত
সাক্ষাৎ করিতে যাইবো।

অথচ, কোথাও জল নাই, বিদ্যুৎ নাই, ভয়ে ভয়ে খুবই
ভীতু হইয়া আছি কেউ যদি আমাকে কিছু বলে,
প্রতিকার কবিবার মতো ভাষা
জানা নাই আমার, অথচ,
সাহসী ছিলেন
আমাদের পিতামহ।

আগে মধুদার ক্যানটিনে আমার নিয়মিত যাতায়াত থাকিবার সুবাদে
মধুদার সহিত গোপন একটি চুক্তি করিয়াছিলাম।

তখন সূর্যসেন হল, কিম্বা মৈত্রী হলের জন্মই হয় নাই।

মধুদা আমাকে স্নেহ করিতেন বলিয়া
একদিন বলিয়াই ফেলিলাম

যদি, আমার চাষাভুষা পিতা ঠিক মতো টাকা পয়সা
নাই দিতে পারেন তাহা হইলে
আপনি আমাকে ‘ফেরেববাজ’ না বলিয়া
আপনার গোপন খাতায় শুধু লিখিয়া রাখিবেন
কত কোটি টাকার চা সিঙ্গারা আমরা
দুইজন খাইয়াছি।

আমি আমার সেই সরলমতি নারীকে কখনোই জানিতে
দেই নাই,
টাকাহীন মানুষের
দুঃখ কষ্টের কথা

ইহার মধ্যে হঠাৎ একদিন ইচ্ছা হইলো
চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়া
আমার তাহাকে
একগুচ্ছ রজনী গন্ধা
হস্তান্তর করিব।

দিনক্ষণ স্থির হইলেও,
দুষ্টু রিস্টওয়াচ বারো ঘটিকাতেই যে নিদ্রা গিয়াছে
তাহা এই নির্বোধ জানিতে পারে নাই।

নিজেকে খুব করিয়া প্রবোধ দিলাম,
খুব ভালো হইয়াছে।

সে হয়তো,
মধুময়, চন্দ্রিমা উদ্যান নাও চিনিতে পারে
ইতিপূর্বে যেমন চেনেন নাই
আরো অনেকেই।


চিরহরিৎ টেলিফোন

মানজুর মুহাম্মদ
আলোর উৎসবে মরে থাকতে নেই, তাই জাগি
ঘুম ঘুম চোখে সকাল দেখি

যন্ত্রণার বাহারী কীটগুলো শুরু করে মস্তিষ্ক ভোজন
দুরু দুরু বুকে চষে যাই কর্তব্যের কঠিন প্রান্তর
উত্তপ্ত চেতনার প্রলাপে রাখি সাত আকাশ বরফ
আগুন পিপাসায় ঢালি সাগর জল

আমার দগ্ধ শরীরের পোড়া পালক তবুও
বাতাসের ডাকে দোসর হয়

বীভৎস সময়ের চৌচির জমিনের
সুদূর কোন প্রান্তকে সবুজ করে
এক সময় বেজে ওঠে চিরহরিৎ টেলিফোন

তার পর আমার ফেরারী অনুভবের হাতে পায়ে
ক্রমশ পড়তে থাকে সুখ-বসন্তের মায়াবী শেকল
যুক্তিবোধ

জাফর সাদেক
খুব কাছে গেলে অনুভবে আসে নৈঃশব্দ এমন এক সঙ্গীত
যা কেবল ক্ষুদের অংশ ল্যাম্পসেড দিয়ে বসারঘর
পাহাড়ের উপমায় উপস্থাপনের নামান্তর

হেমন্তের সোনালি ধানের আলাপন এমন এক আত্মক্ষুধা
অনুভবে তা প্রেয়সীর কপলের তিলের সাথে তুলনা কেবল
ভগ্ন-প্রাসাদের দেয়ালে তেজস্বী বৃক্ষের স্বাতন্ত্রিক প্রকৃতিপঠন

সন্ধ্যের সম্মিলিত আহ্বান এমন এক যুক্তিবোধ
যা অনির্ধারিত যাত্রাবিরতির নিঃস্ব-প্রণয় এবং
সেখানে নগ্ন-রাত্রির পুরানে সব জাগ্রত পানপাত্র জানে
এটা দেবী নিক্সের চেনা শহর

চেনা নগরে এই সুশ্রী শয্যা জেগে আছে নিদ্রার কাছে
খুলে নিতে শিশির দেবীর পায়ের মল
তবে প্রেমী নিদ্রার জাগ্রতরূপ এমন এক অট্টোহাসি
যেখানে সব নষ্টপুরুষ অর্ফিউসের বীণা হাতে অপেক্ষা করে।

No comments

Powered by Blogger.