দিন বদলাতে সর্বাগ্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে- সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ

সংসদ রিপোর্টার সংসদে যোগ দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং তাদের ন্যসত্ম নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান। হিংসা-বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত এবং সঙ্কীর্ণ স্বার্থের উর্ধে উঠে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সংসদে গঠনমূলক, কার্যকর ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য সকল


সংসদ সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, দিন বদলাতে হলে সর্বাগ্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল ঘটাতে হবে। সাংঘর্ষিক রাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে। দিন বদলের তথা জাতীয় উন্নয়নে ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলকেও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। 'বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার' গতানুগতিক ধারা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ সরকার ও বিরোধী; উভয়পৰের সংসদ সদস্যরা জাতির কাছে দায়বদ্ধ। এ জন্য সংসদে সকল পৰই নিয়মিত অংশগ্রহণ করে সংসদকে কার্যকর ও অর্থবহ করবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা।
নববর্ষের শুরম্নতে সোমবার থেকে হওয়া নবম জাতীয় সংসদের শীতকালীন প্রথম অধিবেশনে সাংবিধানিক প্রথা অনুযায়ী প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীতে রয়েছে আমাদের অনন্য পরিচয়। সে পরিচয়কে আমাদের ঐকানত্মিকতা, সততা আর কর্মনিষ্ঠা দিয়ে সমুন্নত রাখতে হবে। হিংসা-বিভেদ নয়, স্বার্থের সংঘাত নয়, আমাদের সবার লৰ্য হবে_ দিন বদলের স্বপ্নের বাসত্মব রূপায়ন। আর সেই স্বপ্ন বাসত্মবায়নের লৰ্যে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক এবং আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ঘোষিত দিন বদলের সনদের আলোকে সর্বসত্মরে এ লৰ্য অর্জনের জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে দেশবাসীকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে তাদের শ্রম, মেধা ও জ্ঞান পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা গড়ে দিয়ে যাব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা- এ হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার।
বিকেল ৩টায় স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে নবম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন শুরম্ন হয়। বিরোধী দল ছিল যথারীতি অনুপস্থিত। বিরোধী দলের কয়েকটি আসন ছাড়া পুরো অধিবেশন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সংসদ সদস্যরা ছাড়াও রাষ্ট্রপতির ভাষণ শোনার জন্য ভিভিআইপি ও ভিআইপি গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির আগমন উপলৰে সংসদ ভবন এলাকার চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো।
দিনের কার্যসূচী অনুযায়ী সভাপতিম-লীর সদস্য নির্বাচন, শোক প্রসত্মাব উত্থাপনের পর তিনটা ২০ মিনিটে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান। রাষ্ট্রপতির প্রবেশের সময় প্রথা অনুযায়ী বিউগলে আগমনী সুর বাজানো হয় এবং প্রবেশের সময় সকল সংসদ সদস্য নিজ আসনে দাঁড়িয়ে যান। সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা এবং মুজিবকোট পরিহিত রাষ্ট্রপতিকে তাঁর দীর্ঘদিনের চিরচেনা সংসদ অধিবেশনে প্রবেশের সময় বেশ সপ্রতিভ দেখাচ্ছিল। রাষ্ট্রপতি স্পীকারের পাশেই স্থাপিত সুদৃশ্য আসনের সামনে এসে দাঁড়ানোর পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এর পর স্পীকার রাষ্ট্রপতিকে তাঁর ভাষণ উত্থাপনের জন্য আহ্বান জানান। নিজ আসনে বসেই রাষ্ট্রপতি সংসদে উত্থাপিত তাঁর ৬৩ পৃষ্ঠার ভাষণের সংৰিপ্তসার জাতির সামনে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এটাই ছিল সংসদে তাঁর দেয়া প্রথম ভাষণ। রাষ্ট্রপতির ভাষণে বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহ্বানের পাশাপাশি মহাজোট সরকারের এক বছরের সাফল্যগুলো তুলে ধরেন। দীর্ঘ বক্তৃতার সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সকল সংসদ সদস্য টেবিল চাপড়িয়ে মাঝেমধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে উৎসাহ দিতে দেখা যায়। ২৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষ হলে পুনরায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করার পর বিকেল পৌনে চারটায় অধিবেশন কৰ ত্যাগ করেন রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমান। এর পরই স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামী ১১ জানুয়ারি সোমবার বিকেল ৩টা পর্যনত্ম মুলতবি ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.