বিসত্মীর্ণ জলরাশি দীর্ঘ সৈকত বনাঞ্চল, কাঁকড়ার ছোটাছুটি- পর্যটন সম্ভাবনাময় গলাচিপার সোনার চর by শংকর লাল দাশ

গলাচিপা থেকে পিকনিক পার্টির পদচারণায় পটুয়াখালীর প্রত্যনত্ম দ্বীপ সোনারচর মুখর হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন বাড়ছে পিকনিক পার্টির সংখ্যা। একদিকে শানত্ম নীল সাগরের বিসত্মীর্ণ জলরাশি। দীর্ঘ সমুদসৈকত। সোনালি বালির মাঝে অসংখ্য লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। জেলেদের ব্যসত্মতা। শুঁটকি পলস্নীর নোনা গন্ধ।


অন্যদিকে বিশাল বনাঞ্চলে সুন্দরবনের আমেজ। প্রকৃতির উজাড় করা মাঝসাগরে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বীপের অপরূপ এ সৌন্দর্যের টানে যেন পিকনিক পার্টির ধুম লেগেছে। শীতের সূর্যকে সঙ্গী করে পিকনিককে অনুষঙ্গ মেনে পর্যটনপিয়াসু মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সোনারচরের ঝোপঝাড় জঙ্গলে। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থাও দমিয়ে রাখতে পারছে না। অদম্য টানে প্রকৃতির সানি্নধ্য পেতে ছুটে চলছে মানুষ। সোনারচরের যেদিকে এখন চোখ পড়ে সেদিকেই পিকনিক পার্টির নারী পুরম্নষ শিশুদের কলরব। চিৎকার চেঁচামেচি। যেন কলকলিয়ে হেসে উঠছে গোটা দ্বীপ সোনারচর। সোনারচরের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দেিণ। একেবারে সাগর মাঝে। চারদিকেই নীল সাগরের বিসত্মীর্ণ জলরাশি। গত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় পর্যটকদের কাছে সোনারচর বিশেষ পরিচিতি পেয়ে আসছে। এবার শীতের শুরম্ন থেকেই জমজমাট হয়ে উঠেছে সোনারচর। বিশেষ করে পিকনিক পার্টির যেন লম্বা লাইন পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সোনারচরে যাচ্ছে একাধিক পিকনিক পার্টি। এসব পিকনিক পার্টির কোন কোনটিতে এক দেড় শ' পর্যনত্ম সদস্য থাকছে। সমানে থাকছে নারী পুরম্নষ শিশু কিশোর। কেউ যাচ্ছে স্পেশাল লঞ্চ নিয়ে। আবার কোন দল যাচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে। অবস্থাপন্নরা যাচ্ছে স্পিডবোটে। সোনারচরের আয়তন কমপ েদশ বর্গমাইল। এর প্রায় পুরোটাই গভীর বনাঞ্চল। উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর আওতায় স্বাধীনতার পরে এ বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। ম্যানগ্রোভ প্রজাতি ছাড়াও সামপ্রতিক কয়েক বছরে সেখানে লাগানো হয়েছে আম জাম কাঁঠাল নারিকেলসহ নানান প্রজাতির গাছ। বনাঞ্চলের গভীরে রয়েছে হরিণের পাল। রয়েছে বুনো মোষ গরম্ন বাঘসহ নানান প্রজাতির জীবজন্তু। সোনারচরের অভ্যনত্মরে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল-উপখাল। এসব খাল যেন সবুজের সুরঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পর্যটকদের কাছে টেনে নিতে। সোনারচরের পূর্ব প্রানত্মে রয়েছে প্রায় দশ কিলোমিটারের মতো লম্বা বিশাল দৈর্ঘ্যের সমুদ্রসৈকত। যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাসত্মের মনোরম দৃশ্য উপভোগের রয়েছে বিশেষ সুযোগ। গড়ে উঠেছে শীতের শুঁটকি পলস্নী। হাজারো জেলের হাঁকডাক চিৎকার মাতিয়ে রাখছে সোনারচরকে।
পর্যটন শিল্পে সোনারচরের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও এ যাবত সংশিস্নষ্ট মহল থেকে কোনই উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে গলাচিপার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম মহিউদ্দিন ব্যক্তিগত উদ্যোগে বছর দু' আগে একটি রেস্টহাউস নির্মাণ করেছিলেন। এখন সেই রেস্টহাউস ঘিরেই বেশির ভাগ পিকনিক পার্টি তাদের আসর বসাচ্ছে। রেস্টহাউসে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকলেও রয়েছে বিশ্রামের ব্যবস্থা। এছাড়া পিকনিকের আসর বসছে দীর্ঘ সমুদসৈকতে। বসছে ঘন জঙ্গলে। উত্তর-দণি প্রানত্মে ও দণি প্রানত্মে বসে সাগরের ঢেউ দেখা যায় অনায়াসে।
সোনারচরে স্থায়ী কোন জনবসতি নেই। কাছের দ্বীপ চরমোনত্মাজে রয়েছে বেশ বড় বাজার। এখানে পিকনিক পার্টির লোকজন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নেয়। যে কারণে এ বাজারটিও মাঝে মধ্যে বেশ জমজমাট।

No comments

Powered by Blogger.