দ্রব্যমূল্যের ওঠানামা-স্থিতিশীলতা প্রয়োজন

রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রবণতা দীর্ঘদিনের। প্রতিবছরই রোজার শুরুতে জিনিসপত্রের দাম চড়ে যায়। এর পর ঈদ যত এগিয়ে আসে মূল্য তত বাড়তে থাকে। তবে এ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর কিছুটা ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যদিও তা যথেষ্ট নয়। অনেকটা মন্দের ভালো।


রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর এখন দেখা যাচ্ছে, কাঁচা তরকারি, ডিম ও ভোজ্য তেলের মূল্য যৎসামান্য কমেছে। বাজার ঘুরে সংবাদপত্রকর্মীরা সে রিপোর্ট করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। লক্ষণীয় যেসব দ্রব্যের বাজারমূল্য কমেছে তার অধিকাংশই এখন সরাসরি উৎপন্ন, যার সরবরাহ বাজারে আসছে। যেমন বর্ষা মৌসুমের তরিতরকারি এখন বাজারে। অন্যদিকে দেশের ও আমদানিকৃত ডাল, পিঁয়াজ ধরনের যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর মূল্য রমজানের আগেই দফায় দফায় বেড়েছে। তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। এখন দু-এক টাকা করে কেজি প্রতি মূল্য কমার বিষয়টি 'আইওয়াশ' কি না, তা নিয়ে ভোক্তাদের মনে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। গত দুই বছরে ভোজ্য তেলের দাম লাফিয়ে বেড়েছে দ্বিগুণ। এলসি খুলে যে মূল্যে তেল আনা হয়েছে, তার দ্বিগুণ মূল্যে তা বাজারে ছাড়া হয়েছে। এখন পাঁচ লিটার তেলের মূল্য ৬৮০ টাকা থেকে ৬৭০ টাকা বা ডিমের হালি ৩৫ টাকা থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হওয়াটা মূল্য হ্রাসের ক্ষেত্রে কতটা উল্লেখ করার মতো, সেটা ভেবে দেখার বিষয়। এই ডিমের মূল্য তিন মাস আগে ৬৫ টাকা থেকে অযৌক্তিকভাবে লাফিয়ে ১১৫ টাকায় উঠে যায়। তখন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবুও বলতে হবে, মূল্য না বেড়ে যে কিছু প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য একটু হলেও কমেছে, তা ইতিবাচক।
তবে এটাই যথেষ্ট নয়। আগের তুলনায় দেশের প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেশি। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ। আর এই বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা অতি আবশ্যক। প্রথমত, বাজার মূল্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। দেশের বাজার মূল্যে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। কোনো কারণ ও ব্যাখ্যা ছাড়াই মূল্য ওঠানামা করে। আবার একই পণ্যের জন্য জায়গা বিশেষে একেক রকম দাম দিতে হয় ক্রেতাসাধারণকে। দ্বিতীয়ত, বাজার মূল্য সহনীয় হতে হবে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। দেশের সাধারণ মানুষের আয়ের সব অর্থই যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ে চলে যায়, তাহলে জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র জোগাড় করাটা যেন সহনশীল হয়, সেটা লক্ষ রাখার দায়িত্ব সরকারের। সে কাজটি সুচারুরুপে হচ্ছে না। তৃতীয়ত, বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা নিশ্চিত করতে আমদানি জটিলতা দূর করাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করা, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করা প্রয়োজন। সরকারের নিশ্চয়ই জানা আছে, এসব সমস্যা একটির সঙ্গে আরেকটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না হলে কৃষকের উৎপন্ন ফসল যেমন সঠিক মূল্য পায় না, তেমনি ভোক্তাকে তা চড়া দামে ক্রয় করতে হয়। সেই সঙ্গে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজার তদারকি। বাজারে যার যেমন ইচ্ছা মূল্য নির্ধারণ করে চলেছে। এ থেকে বুঝতে কোনোই অসুবিধা হয় না যে সরকারের বাজার তদারকির কাজটি অত্যন্ত দুর্বল। মোট কথা, মানুষের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ প্রয়োজন। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি বাড়াতে হবে। মনে রাখা দরকার, দ্রব্যমূল্য সহনসীল হলে সমাজে অস্থিরতাও কমে আসে। সে অর্থে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সমাজের স্বাস্থ্যটাও নিবিড়ভাবে জড়িত।

No comments

Powered by Blogger.