সারাদেশ থেকে ৬৪০ অভিযোগ এসেছে তদন্ত সংস্থায় যুদ্ধাপরাধী বিচার by বিকাশ দত্ত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সারাদেশ থেকে প্রায় ৬৪০টি অভিযোগ তদন্তকারী সংস্থায় এসেছে। লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের কারণে তার তদন্ত করা যাচ্ছে না। অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে মাত্র চারজনের বিষয় পরীক্ষা করা হয়েছে। এই চারজন বর্তমানে জেলা কারাগারে আটক রয়েছে।


লোকবল না বাড়ালে অভিযোগ যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থাতেই পড়ে থাকবে। দ্বিতীয় দফায় জেলা পর্যায়েও তদন্ত কাজ থেমে গেছে। লোকবল বাড়ানোর পরপরই জেলা পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়েও তদন্ত শুরু হবে। লোকবল না বাড়ালে এটা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক প্রথম দফায় যে ২০ জনের তালিকা করেছিল তার মধ্য থেকে ১০ জনের বিচার কাজ শুরু হয়েছে। চৌধুরী মইনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান খান, মাওলানা একেএম ইউসুফ ও সৈয়দ মোঃ কায়সারসহ অবশিষ্টদের বিরুদ্ধেও শীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের আনা না গেলে অনুপস্থিতেই বিচার করা হবে।
অন্যদিকে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলমান প্রক্রিয়ায় দু’-একটি করলেই হবে। সাক্ষী ও প্রসিকিউশনেরর নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। তদন্ত সংস্থায় লজিস্টিক সাপোর্ট না বাড়ালে তদন্তের কোন গতি আসবে না। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আলবদরকে কেন সংগঠন হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে না। এদিকে তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশন বিভাগে লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে গবেষণা কাজ ধীর গতিতে এগুচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য পুরনো হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দুটি ট্রাইব্যুনালে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন গ্রেফতার আছেন। একজন পলাতক রয়েছেন। আর ৮ জনের বিরুদ্ধে বিচার কাজ চলছে।
তদন্তকারী সংস্থার প্রধান আইজিএমএ হান্নান খান জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রথম দফায় যে ২০ জনের তালিকা হয়েছিল তার মধ্যে থেকে ১০ জনের বিষয়ে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। এখনও আর ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন শীঘ্রই দেয়া হবে। বুদ্ধিজীবী হত্যা সঙ্গে জড়িত চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান, খুলনার একেএম ইউসুফ, হবিগঞ্জের সৈয়দ কাওসারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ৬৪০টি অভিযোগ এসেছে। সেগুলো জনবলের অভাবে তদন্ত করা যাচ্ছে না।
আমি সন্তুষ্ট- টিপু ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিচার সম্পন্ন করাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে এর গতিশীলতার ওপরে তিনি বলেন, এখন যে গতি আছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। আশা করছি এই গতি অব্যাহত থাকলে বিচার চলতি বছরেই মধ্যেই নিষ্পন্ন করা সম্ভব। যে মামলাগুলো আছে তা এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে।আসামি পক্ষের দেয়া সাক্ষীদের তালিকা সম্পর্কে চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেছেন, অসৎ উদ্দেশ্যে এত বড় তালিকা দেয়া হয়েছে। এটা হলে ৫/১০ বছরেও মামলা শেষ হবে না। ট্রাইব্যুনালই ঠিক করে দিতে পারে কতজন সাক্ষী তাদের দিতে হবে। কড়াকড়ি না হলে হবে না। এভাবে চলতে পারে না। তিনি আরও বলেন, জেরার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল একটা সময় বেঁধে দিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২ দুটি মেয়ে সাক্ষীর বিষয়ে বলেছে সেখানে পুরুষ কেউ থাকতে পারবে না। বিচারক ইচ্ছে করলে বিচারের স্বার্থে আইন অনুযায়ী সব কিছুই করতে পারেন।
অগ্রাধিকার দিতে হবেÑ শাহরিয়ার কবির ॥ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, যে মামলাগুলো বিচারাধীন সেগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করতে হবে। ওই সব জায়গায় ঘাটতি আছে তা অতিসত্বর পূরণ করা প্রয়োজন। তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, সাক্ষ্য নিরাপত্তা আইন করতে কে বাধা দিচ্ছে। সাক্ষীরা নিরাপত্তার অভাবে সাক্ষী দিতে আসছে না। মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে এসে নিরাপত্তার অভাবে বিদেশ পালিয়ে গেছে। এ ছাড়া গোলাম আযম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসছে না। তিনি বলেন, সাক্ষীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা দিতে হবে। একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে গেলে তাকে অন্তত তিন বছরের জন্য নিরাপত্তা দেয়া প্রয়োজন। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, প্রসিকিউশন বিভাগে বেতন ভাতাদি, নিরাপত্তা ও যানবাহনের ব্যবস্থা করা না হলে তারা মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারবে না ।এখন পর্যন্ত সকল প্রসিকিউটর সাধ্যের বাইরে কাজ করছে। তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ আর আসবে, সেগুলো দেখতে হবে। লোকবলের অভাবে তা দেখা না গেলে এর জবাব সরকারকেই বহন করতে হবে।
মামলার গতি ভালÑ রানাদাশ ॥ প্রসিকিউটর রানাদাশগুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, মামলার গতি যে ভাবে আছে, সেই ভাবে চললে হয়ত জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংশোধনী এনেছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজন ও অপরিহার্য মনে করলে ট্রাইব্যুনাল যে কোন আদেশ প্রদানের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা অনুশীলনের এখতিয়ার এবং প্রদত্ত কোন আদেশ রিভিউ করার এখতিয়ারও ট্রাইব্যুনালের থাকবে মর্মেও বিধি সন্নিবেশ করা হয়েছে।
৪ জন জেলে ॥ প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছেন, তদন্ত সংস্থায় যে ৬৪০টি অভিযোগ এসেছে এর মধ্য থেকে চারটি বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলো হলে খুলনা বিভাগের আফজাল মিয়া, রাজশাহী বিভাগের মাগমারা মোঃ আজাহার আলী, রবিশাল বিভাগের গলাচিপার রুস্তম সিকদার ও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাক্ষণবাড়িয়ার হাজী মোবারক হোসেন। এরা চার জনই মানবতাবিরোধী মামলার অভিযোগে স্থানীয় জেলা কারাগারে রয়েছে। হাজী মোবারক হোসেন বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নজরে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার শুনানি ও আদশের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার জন্য দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর একজন ট্রইব্যুনালের আদেশের দিনই পালিয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, জামায়াতের মজলিশে শূরার সদস্য মীর কাশেম আলী। বিএনপির স্থায়ী কমিটর সদস্য সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আব্দুল আলীম। বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও পলাতক রয়েছেন।
মামলার অবস্থা ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মামলাগুলো কি অবস্থায় আছে।
ট্রাইব্যুনাল-১ ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৬টি মামলা রয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলী, বিএপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বিচার চলছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার হাজী মোবারক হোসেনের মামলাটি রয়েছে। ইতোমধ্যে রবিবার থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে বলে প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে। ট্রাইব্যুনাল সোমবার হাজী মোবারক হোসেনের বিষয়ে শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
বিচারের গতি সন্তোষজনক ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এখন যেভাবে বিচার কাজ করছে তারা প্রসিকিউটরবৃন্দ আশাবাদী চলতি বছরেই বেশ কিছু মামলার রায় দেয়া য়াবে। মামলার গতি এখন সন্তোষজনক। যে মামলাগুলোর সাক্ষ্য চলছে তার মধ্যে জামায়াতের ইসলামী নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে। এখন তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করছে আসামি পক্ষের আইনজীবী।
সাঈদী ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মোঃ হেলাল উদ্দিনকে জেরা অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ২৯ কর্মদিবসে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাঁকে জেরা করেছেন। অন্য ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে রয়েছেন, মাহাবুব উদ্দিন হাওলাদার, রুহুল আমীন নবীন, মিজানুর রহমান তালুকদার, সুলতান আহমেদ হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার, মানিক পসারী, মফিজ উদ্দিন পসারী, মোঃ মোস্তফা হাওলাদার, মোঃ আলতাফ হোসেন হাওলাদার, বাসুদেব মিস্ত্রি, আব্দুল জলিল শেখ, আব্দুল আওয়াল এমপি (বর্তমান), গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা, আব্দুল হালিম বাবুল, মোঃ সেলিম খান, জুলফিকার আলী, মোঃ রবিউল আলম খান। পিআইবির ক্যাটালগার, এসএম আমিরুল ইসলাম। পিআইবির চতুর্থ শ্রেণীর বুক সার্টার, ফাতেমা বেগম, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের গাইড কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ নেছার, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের গাইড, ইজাব উদ্দিন মিয়া, বাংলা একাডেমীর গ্রন্থাগারিক, মাসুম উল কবির, গ্রন্থাগারিক ডিস্ট্রিবিউটর, মধুসূদন ঘরামী, মোঃ হোসেন আলী, মোঃ মোবারক হোসেন, আবেদ খান ও সাইফ হাফিজুর রহমান। এ ছাড়া আরও ১৫ জন সাক্ষী যাদের বক্তব্য ট্রাইব্যুনাল জবানবন্দী হিসেবে প্রহণ করেছে তারা হচ্ছেন উষা রানী মালাকার (৭৮), সুখরঞ্জন বালি (৫৭), আশীষ কুমার ম-ল (৫৫), সুমতি রানী ম-ল (৫৮), সমর মিস্ত্রী (৫৭), সুরেশ চন্দ্র ম-ল (৭০), গণেশ চন্দ্র সাহা (৪৫), শহিদুল ইসলাম খান সেলিম (৫৫), মোঃ মোস্তফা (৫০), আব্দুল লতিফ হাওলাদার (৬২), আইয়ুব আলী হাওলাদার (৬২), সেতারা বেগম (৭৫), অনিল চন্দ্র ম-ল (৭৬), রানী বেগম (৫২), অজিত কুমার শীল (৭৫)। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের এক মামলায় সাঈদীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়।
গোলাম আযম ॥ জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ১১ জানুয়ারি ট্রাইবু্যুনালের আদেশে হাজির করার পর জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজনসেলে রাখা হয়। ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
১ জুলাই থেকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া শুরু হয়েছে। ১ জুলাই প্রথম সাক্ষী ইতিহাসবিদ গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন আসামি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জবানবন্দী প্রদান করেন। এরপর তাঁকে ৪ দিন জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। আজ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করবেন।
সাকা চৌধুরী ॥ ২০১০ সালের ২৬ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সলাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের জন্য ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর ভোরে বনানীর একটি বাসা থেকে অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এটি ছিল হরতালের আগে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলা। পরে তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়।
এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এরা হলেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল¬াহ, মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরু বাঙালী ও গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ, প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ ও এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র্র শর্মা। ১৬ জুলাই ৭ম সাক্ষী আব্বাস চেয়ারম্যানের সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে।
নিজামী ॥ জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটরের ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) আজ তারিখ পুনর্র্নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ জুলাই থেকে প্রসিকিউশন পক্ষের ওপেনিং স্টেটমেন্টের (সূচনা বক্তব্য) মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর কথা রয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট অন্যদের সঙ্গে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
মীর কাশেম আলী ॥ ১৭ জুন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের এই আদেশ হাতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মীর কাশেমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে এ আবেদন জমা দেয়া হয় বলে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জানান।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য মীর কাশেম আলীকে সেফহোমে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া ১২ আগস্ট তার বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন অথবা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে হবে প্রসিকিউশনের তদন্ত দলকে। ওই দিন আসামিকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ॥ এ দিকে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত করা, লুটপাট, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫টি, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি, নায়েবে আমির মাওলান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি এবং আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.