বরিশালে আরেকটি ‘পুকুর হত্যা’

পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি সড়কে অবস্থিত জেলা পুলিশের পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরটির একাংশের মালিক দাবিদার এক ব্যক্তি গত শুক্রবার রাত থেকে ভরাট-প্রক্রিয়া শুরু করেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের হিসাবমতে, ব্যক্তিমালিকানা বাদে নগরে ১১টি পুকুর আছে।


এর মধ্যে বিবির পুকুর, রাখাল বাবুর পুকুর, জেলা পরিষদ পুকুর, কাটপট্টি থানা পুকুর, শিশুপার্ক পুকুর, ফকিরবাড়ি পুলিশ ক্লাব পুকুরের হিসাব পাওয়া যায়। বাকিগুলোর খোঁজ নেই। এর মধ্যে পুলিশ ক্লাব পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরটির একাংশের মালিক আজিজ সরদার গত শুক্রবার গভীর রাত থেকে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করেন। শনিবার রাতেও পুকুরটি ভরাট করতে দেখা গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, বরিশালের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস জানান, জনবহুল এলাকায় পুকুর-জলাশায় ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিজস্ব পুকুর হলেও সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। ওই পুকুর ভরাটের বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি।
তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, পুকুর-জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন আছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে জানা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা অশোক হালদার বলেন, ‘শহরের মাঝখানে এত বড় একটা পুকুর ভরাট হইয়া গেলে কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে পানি পাইবে কই?’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুকুরটি জেলা পুলিশের সম্পত্তি হিসেবেই ছিল এত দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলে যাওয়ার পর পুকুরের একটি অংশের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করা হয়। ওই মামলায় আদালত সাত আনা অংশ দলিলউদ্দিন সরদারের নামে এবং বাকি নয় আনা পুলিশ ক্লাবের বলে রায় দেন।
সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দীপক চক্রবর্তী বলেন, বরিশাল বগুরা-আলেকান্দা মৌজায় জেলা পুলিশের নামে ৭৫ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে একটা অংশ ক্লাব এবং বাকি অংশ পুকুর। ইতিপূর্বে পুকুরের চারপাশ ভরাট হওয়ার পরও প্রায় ৫০ শতাংশ পুকুর রয়েছে। প্রবীণ আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, ঐতিহ্যবাহী পুলিশ ক্লাব পুকুরটি ভরাট শুরু হয়েছে। আইন শক্ত না হওয়ায় পুকুর ভরাট হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ভূমি প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া অত্যাবশ্যক।
অশীতিপর নিখিল সেন অভিযোগ করেন, সরকারি পুকুর যেমন ভরাট হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা প্রায় প্রতিটি পুকুরই কমবেশি বেদখল ও আংশিক ভরাটের মাধ্যমে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। এসব কারণে নিত্যব্যবহার্য পানির সমস্যা প্রকট হচ্ছে।
বরিশালের পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই পুকুর নিয়ে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিদের সঙ্গে মামলা চলছিল। মামলায় তাঁরা সাত আনা অংশ পান। তাঁরা তাঁদের অংশ ভরাট করছে কি না জানি না। তবে আমাদের অংশ ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুকুর ভরাটকারী দলিলউদ্দিন সরদারের ছেলে আজিজ সরদার বলেন, ‘আমরা আমাদের রেকর্ডীয় পুকুর ভরাট করছি। ব্যক্তিগত পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই বলেই জানি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) স্থানীয় কর্মকর্তা লিংকন বায়েন বলেন, ‘এর আগেও পুলিশ ক্লাব পুকুর ভরাটের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করি। ওই মামলা এখনো বিচারাধীন। তার পরও পুকুর ভরাট বন্ধে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.