স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থেই প্রকাশ করা জরুরি-বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

কী কারণে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেছে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সরকার বলছে, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি, বিশ্বব্যাংক অন্যায়ভাবে চুক্তিটি বাতিল করে বাংলাদেশের মানুষকে অপমান করেছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের দাবি, দুর্নীতির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি গণমাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে লেখা সরকারের ছয়টি চিঠিও হস্তান্তর করেছেন। এর মাধ্যমে দেশবাসী বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের জবাবে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক কী কী অভিযোগ এনেছিল, তা জানতে পারেনি। যে কারণে নানা গুজব ডালপালা মেলেছে। বিরোধী দলও বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বিশ্বব্যাংক তাঁদের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনটি যেহেতু ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ আখ্যায়িত করেছে, সেহেতু এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না। অন্যদিকে গতকাল ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেছেন, স্বচ্ছতা ও জনস্বার্থে সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির প্রমাণ’ হিসেবে বিশ্বব্যাংক যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা প্রকাশ করতে পারে। তিনি এও বলেছেন, বাংলাদেশসহ সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে দায়বদ্ধতার কারণেই বিশ্বব্যাংক নিজে থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে না। এই সাক্ষাৎকারে অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের পক্ষে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছেন, সরকার নিশ্চয়ই তার জবাব দেবে। এ বিষয়ে আমরা আগাম কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য অযৌক্তিক নয়।
বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি বলেছেন বলেই নয়, আমরা নিজস্ব বিবেচনা দিয়েই বুঝতে পারছি যে নিজেদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত জনসমক্ষে পদ্ম সেতুসংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা। যে প্রকল্পটির সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি মানুষের আবেগ ও মর্যাদা জড়িত, সেই প্রকল্পটি কার বা কাদের দোষে বাতিল হলো, তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই দেশবাসীর আছে।
সরকারের দাবি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকের অভিযোগটি মনগড়া, না এর সারবত্তা আছে—প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা যেহেতু শুরু থেকেই বলে আসছেন যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি, তাহলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে বাধা কোথায়?
জাপানসহ অন্য যেসব উন্নয়ন-সহযোগী পদ্মা সেতুর ব্যাপারে সরকারের কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের আস্থা অর্জনের জন্যও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা প্রয়োজন। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করার কথা বলেছে। সেতুর কাজ থেমে না থাকুক, সেটা আমরাও চাই। দেশবাসীও চায় পদ্মা সেতু হোক। কিন্তু তার আগে উত্থাপিত অভিযোগের সুরাহা হওয়াও কম জরুরি নয়।

No comments

Powered by Blogger.