১৪ বাজার মনিটরিং টিমের কাজ দায়সারা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সঙ্কট ॥ কোন কোন পণ্যে মুনাফার হার এক শ’ শতাংশ by মিজান চৌধুরী

দায়সারা চলছে ১৪টি বাজার মনিটরিং টিমের কাজ। মনিটরিংয়ে গেলেও টিমগুলো সঙ্গে পাচ্ছে না পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট। লোকবল সঙ্কটে শুক্রবার সকল মনিটরিং টিমের কাজ বন্ধ রাখা হয়। দুই একটি টিম বাজারে গেলেও শুধু পণ্যের দাম লিখে নিয়ে চলে আসছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।


যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোজায় দ্র্ব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় ভূমিকা রাখতে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে বাজার মনিটরিং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্পেরোয়া হয়ে উঠেছে কতিপয় ব্যবসায়ী। রোজার আগেই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মুনাফা এক থেকে দশ শতাংশের মধ্যে রাখার বিধান করে দেয়া হলেও শতভাগ মুনাফা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারছে না টিমগুলো।
বাজার মনিটরিং টিমের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সঙ্কট দেখা দেয়। যে কারণে মনিটরিং টিমগুলো বাজার পরিদর্শনে গেলে জেল জরিমানা করতে পারছে না। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের একটি বৈঠক থাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়ার পরও মনিটরিং টিমের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট পায়নি। এছাড়া শেয়ারবাজারে বিক্ষোভসহ অন্যান্য কর্মসূচীর কারণে ডিএমপি থেকেও পুলিশ দিতে পারেনি। যে কারণে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে।
গত ১১ জুলাই বাজার মনিটরিং টিমের ১১ নম্বর দল পরিদর্শনে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে মন্ত্রণালয়ে তাদের জমা দেয়া রিপোর্টে বলা হয়, বাজার মনিটরিংয়ের সময় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পাওয়া যায়নি। আগামীতে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ যাতে মনিটরিং টিমের সঙ্গে থাকে সে ব্যাপারে নজর দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। অবশ্য ওই টিম সেদিন কাঠালবাগান ও হাতিরপুল বাজার পরিদর্শন করলে শুধু পণ্যের নাম লিখে নিয়ে আসা ছাড়া মনিটরিং রিপোর্টে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
যদিও মনিটরিং টিমগুলোকে খুচরা ও পাইকারি বাজার পরিদর্শন করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও মতামত প্রতিবেদন আকারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ বাস্তবায়নে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া আছে।
জানা গেছে, রোজার বাজার সামাল দিতে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৪টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব জেহসান ইসলাম, এনামুল হক, হারুন-উজ-জামান ভূঁইয়া, বেগম দিলরাজ বানু, আব্দুর রহমান, নিতাই পদ দাস, ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক নেছার আহমেদ, এ এস এম নুরুল আলম, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান সৈয়দা গুলশান নাহার, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের যুগ্মপ্রধান শহিদুল হক, টিসিবির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, প্রধান কর্মকর্তা কাজী মোঃ ইফতেখার হোসেন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর উপপরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ ও এম হাবিবুল হাসান চৌধুরী মনিটরিং টিমগুলোর দায়িত্বে আছেন। এ ব্যাপারে এক ও দুই নম্বর মনিটরিং টিমের দায়িত্বে জেহসান ইসলাম ও সৈয়দা শুলশান নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার তারা বাজার মনিটরিংয়ে যেতে পারেনি। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে ফোন এসেছে, মনিটরিংয়ে যেতে হবে না। তাঁরা জানান, হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে যে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে এ বাজার মনিটরিংয়ে নামতে বারণ করা হয়। সৈয়দা শুলশান নাহার বলেন, বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম।
এদিকে মনিটরিং টিমগুলো দুর্বলতার কারণে রোজা সামনে রেখে রাজধানীর পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ও কাওরান বাজারের কতিপয় ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে দাম বাড়াচ্ছে আমদানিকারক ও রিফাইনারি মালিকরা। টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা, সয়াবিন লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১২৩ টাকায় উঠেছে। অন্যান্য পণ্যও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা হিসাব কষে দেখেছি কোন কোন পণ্যে ব্যবসায়ীরা এক শ’ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে। যদিও পাইকারি ও আমদানিকারক পর্যায়ে এক শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০ শতাংশের বেশি মুনাফা না করতে বলা হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন মনে করছে, মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার কারণেই বাজার এতটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। ট্যারিফ কমিশনের গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, আমদানি মূল্য, শুল্ক পরিশোধ, পরিবহন ও মুনাফা যোগ করে প্রতিকেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ মূল্য ১৪ টাকা হওয়া উচিত। সেখানে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, মুনাফা করা হচ্ছে কেজিতে প্রায় ১১ টাকা। খেজুরের সর্বোচ্চ মূল্য হওয়া উচিত ৬৬ টাকা, সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে ১শ’ টাকা, প্রতি কেজিতে মুনাফার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ৩৪ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.