ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদা ॥ ৭৯ বছর জেল-সহযোগীরও কারাদণ্ড ॥ ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করে জরিমানা

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাগ্নে ‘ইয়াবা সম্রাট’ আমিন হুদা ও তার সহযোগী আহসানুল হক ওরফে হাসানকে নেশার বড়ি ইয়াবা ও উদ্ধার হওয়া অন্যান্য মাদকের ২টি পৃথক মামলায় ৭৯ বছর করে সশ্রম কারাদ- দিয়েছে আদালত। রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহার হোসেন এ রায় প্রদান করেন।


এ সময় আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এ ছাড়া আসামিদের উভয়কেই দ-ের অতিরিক্ত ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করে অর্থদ- করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ বছর অতিরিক্ত কারাদ- প্রদানেরও নির্দেশ দেন বিচারক। তবে দুটি মামলায় একই সঙ্গে রায় হওয়ায় একটি মামলায় সর্বোচ্চ ১৪ বছর করে মোট ২৮ বছর দ- ভোগ করতে হবে প্রত্যেককে। এদিকে রায় ঘোষণার আগে আসামি আমিন হুদার পক্ষে রায় স্থগিত রেখে মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহিদুল ইসলামের সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, যেহেতু এসআই জাহিদুল ইসলাম মিশন থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন এবং তিনি বর্তমানে চাঁদপুর জেলার সদর নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন। তাই তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হোক। অন্যথায় তার প্রদান করা তদন্ত রিপোর্ট যেমন, খসড়া মানচিত্র, সূচীপত্র, এদের ব্যাখ্যা, জব্দ তালিকা, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দী, ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে উল্লেখে প্রদত্ত চার্জশীট এক্সপাঞ্জ করা হোক। নতুবা তার সাক্ষ্য ছাড়া রায় ঘোষণা করা হলে রায়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আসামি পক্ষের এই আবেদনের বিরোধিতা করেন পিপি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের এখন প্রয়োজন নেই। এতে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটবে না। শুনানি শেষে বিচারক আসামিপক্ষের রায় ঘোষণা স্থগিতের আবেদন নামঞ্জুর করেন। রায় স্থগিতের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় আমিন হুদার পক্ষে আরেকটি আবেদন করে বলা হয়, তারা রায় স্থগিতের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করবেন। তবে আদালত ওই আবেদনও নামঞ্জুর করে রায় ঘোষণা করে।
দ-িতদের মোট ২৮ বছর দ- ভোগের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম রফিকুল ইসলাম। তবে পিপির এ মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন আসামির আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি একসঙ্গে রায় হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ ১৪ বছর করে কারদ- ভোগ করতে হবে বলে জানান। তিনি আরও জানান, আদালত আসামিদের বক্তব্য না শুনে বাদী পক্ষের বক্তব্য শুনে এ রায় দিয়েছে। তাঁরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহার হোসেন ইয়াবা ব্যবসায়ী আমিন হুদা ও তার সহকারী আহসানুল হক ওরফে হাসানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
রায় ঘোষণার আগে দুটি মামলার একটিতে ২৫ জন ও অপর মামলার ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলাগুলোতে আমিন হুদা ও তার সহযোগী হাসানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে মুক্তি পান আমিন হুদা। গত ১ জুলাই মামলার যুক্তিতর্ক শেষে তাকে পুনরায় কারাগারে নেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর আমিন হুদা ও তার সহযোগী আহসানুল হক হাসানকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই দিন তাদের হেফাজত থেকে ৪২ ধরনের ১৩৮ বোতল বিদেশী মদ, ১ লাখ ৩০ হাজার আইস পিল (ইয়াবার বিকল্প), ভায়াগ্রা ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম, ফেনসিডিল, বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, ১২টি মোবাইল ফোন ইত্যাদি উদ্ধার করে।
দুই মামলার একটিতে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এবং ৩০ জানুয়ারি অন্যটিতে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। আদালত রায়ে জব্দকৃত মাদক ও মাদক তৈরির সরঞ্জাম ধ্বংস করারও নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানান পিপি রফিকুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.