সাতক্ষীরার তালায় ফের সংগঠিত হচ্ছে চরমপন্থীরা-অস্ত্র সংগ্রহ ও দল গোছাতে ডাকাতি চাঁদাবাজি শুরু, জনমনে আতঙ্ক ॥ দুই ক্যাডারকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার

সাতক্ষীরার তালায় চরমপন্থীরা ফের সংগঠিত হচ্ছে। উপজেলার কয়েকটি স্থানে তারা কয়েকবার গোপন বৈঠক করেছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে। অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ ও দল গোছানোর কাজে অর্থ যোগাড় করতে এলাকায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকা- শুরু হওয়ার পর জনমনে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।


এদের ধরতে পুলিশী অভিযান সফল করতে এখন জনগণের সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত চরমপন্থী ক্যাডার বিদ্যুৎ বাছাড় ও মোজাফ্ফর রহমানকে ধরিয়ে দিতে রবিবার তালা থানার ওসি ১০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। সন্ত্রাসীদের তালিকা করা হচ্ছে এবং দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ এদের সহযোগীদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে স্বীকার করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান রবিবার বিকালে জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকার পর জামিনে মুক্তি পাওয়া চরমপন্থী ক্যাডার বিদ্যুৎ বাছাড় পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় এখন মোস্ট ওয়ানটেড। গত মাসে জামিনে মুক্তি পেয়ে বিদ্যুৎ বাছাড় এলাকায় ফের সংগঠন গড়তে কাজ করছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর একে একে সন্ত্রাসীরা খোলস পাল্টে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে এবং নেতাদের শেল্টারে থেকে রাতে তারা নিষিদ্ধ দলের সদস্য পরিচয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে কারাগারে আটক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এদের মধ্যে অনেকে পুরনো সংগঠন চাঙ্গা করতে উঠতি বয়সের যুবকদের দলে নেয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ইউপি সদস্য রাসেদ সানাকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার পর এই সন্ত্রাসীদের নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তালা উপজেলার জাতপুর, আলাদিপুর, জেয়ালা নলতা, মহান্দী, হাজরাকাটি, খলিলনগর, তালা সদর, মাগুরা, খেশরা, বালিয়া ও ডুমুরিয়ার সীমান্তবর্তী চ-িপুর, মাগুরাঘোনাসহ কয়েকটি এলাকায় চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের দলনেতা হিসেবে পরিচিত মাগুরা এলাকার বিদ্যুৎ বাছাড়, দোহার এলাকার মোজাফ্ফর, জাতপুরের ওয়াজেদ বিশ্বাস, চ-িপুরের হযরত আলী, ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনার করিম ওরফে লিটনসহ কয়েকজন এ সব বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং নিষিদ্ধ দলকে পুনরায় সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীর নামে তালাসহ বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এরা সবাই থানা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন কারাভোগ ও আত্মগোপনে থাকার পর এসব সন্ত্রাসী সম্প্রতি এলাকায় ফিরেছে। ইতোমধ্যে জাতপুর, ডাঙ্গানলতা, চ-িপুর, জেয়ালাসহ কয়েকটি স্থানে তারা গোপন বৈঠকও করেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে খলিশখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে একক আধিপত্য বিস্তার করত নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি। একের পর এক হত্যা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যেতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পার্টির মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। এই সুযোগে আলোচিত হয়ে ওঠে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির লিডাররা। এ সময় পূর্ববাংলা পার্টি থেকে ছুটে আসা সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়া হয় ভারি অস্ত্র। আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি। এতে করে দুই পার্টি মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সুযোগে মুখোশধারী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার লোভে সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিতে শুরু করে। শুরু হয় একের পর এক বোমাবাজি, ঘের দখল ও হত্যার মতো অপরাধ।
১৯৯৫ সালের ৩১ মার্চ রাতে খলিশখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার আলী খাকে গুলি করে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় হত্যার রাজনীতি। সর্বশেষ আটারই গ্রামের স্কুলছাত্রী আসমা, ঘোনা গ্রামের রাবেয়া বেগম,আগৈলঝাড়া গ্রামের নাসিমা বেগম, জেয়ালানলতা গ্রামের বাবলু নিকারী, জাতপুর এলাকার আরশাফ মোড়ল হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকা- অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হওয়ার পরও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ধরা পড়ে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের আটক করলেই রাজনৈতিক নেতাদের তদ্বির বেড়ে যায়। তাদের কথা না শুনলেই বদলিসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয়। এসব কারণেও চরমপন্থী সদস্যরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে তালা থানার ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত বিদ্যুৎ বাছাড় ও মোজাফ্ফরকে ধরিয়ে দিতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। জনগণের সহযোগিতা পেলে এদের আটক করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।

No comments

Powered by Blogger.