যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি-তৃণমূলে অসন্তোষ ও হতাশা

আওয়ামী যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষস্থানীয় পদে নেতা নির্বাচনে খুশি হতে পারেননি তৃণমূলের নেতারা। কাউন্সিলে তাঁদের মতামত প্রাধান্য না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে প্রথম আলোর কাছে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।


কুমিল্লা অঞ্চলের যুবলীগের এক কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা যাকে নেতা হিসেবে চেয়েছিলেন, তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে আমরা খুশি হতে পারিনি।’
আবার সিলেট অঞ্চলের এক কাউন্সিলর বলেছেন, ‘নেতা নির্বাচনে কাউন্সিলরদের মতের প্রতিফলন ঘটেনি, এটা সত্য। যেহেতু দলের উচ্চপর্যায় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে, এখন তাঁদের সঙ্গেই কাজ করতে হবে।’
দীর্ঘ নয় বছর পর ১৪ জুলাই যুবলীগ ও ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাউন্সিল হয়। যুবলীগের কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিশৃঙ্খলা-হট্টগোল করে অনেকে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান। পরে অধিবেশনে মুলতবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করা হয়।
যুবলীগের সভাপতি পদে ওমর ফারুক চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আগের কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি। আর সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হারুন অর রশীদ দীর্ঘদিন ধরেই যুবলীগের সঙ্গে আছেন এবং আগের কমিটিতে তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, যুবলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম সংগঠনে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর ঘনিষ্টজনদের দাবি, তিনি যুবলীগে আর থাকতে চাননি। তবে কংগ্রেসের তিন-চার দিন আগে হঠাৎ করেই তাঁকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু হয়। এমনকি কংগ্রেসের আগের দিন যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে মির্জা আজম ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের নামে খুদেবার্তা (এসএমএস) সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মুঠোফোনে ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেসের প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে মির্জা আজমের নামে ব্যাপক স্লোগান হয়। তখন প্রচণ্ড হট্টগোলের কারণে দ্বিতীয় অধিবেশন মুলতবি করা হয়। যুবলীগের কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, মির্জা আজমের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কেউ কেউ পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
এদিকে গতকাল সকালে যুবলীগের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে শুভেচ্ছা জানান।
আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব মনোনয়নেও কাউন্সিল ও ডেলিগেটদের মতের প্রতিফলন ঘটেনি। আগের কমিটির সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে পুনরায় একই পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এ সংগঠন দুটির কাউন্সিলকে ঘিরে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। একশ্রেণীর নেতার ব্যানার, পোস্টার আর বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে গোটা রাজধানী। এসব নেতার বেশির ভাগই গত সাড়ে তিন বছরে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে সংগঠন থেকেই অভিযোগ উঠেছে। সাংগঠনিক কাজে জড়িত না থাকলেও তাঁরা টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার চেষ্টায় আছেন।
যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। খুব দ্রুততম সময়েই কমিটি করা হবে বলে জানা গেছে। কমিটির অন্য পদগুলোতে স্থান পেতে নানা রকম চেষ্টা-তদবির চলছে। এ দৌড়ে বিতর্কিত অনেকেই আছেন বলে জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেমন হতে পারে—জানতে চাইলে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের তালিকা আছে। এ ছাড়া নবীনদেরও একটা খসড়া আছে। সব মিলিয়ে একটা ভালো কমিটি করার চেষ্টা করা হবে।
আর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার। তিনি দাবি করেন, যাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাঁদের কমিটিতে নেওয়া হবে না।

No comments

Powered by Blogger.