মন্ত্রীদের সুটের বদলে হাফশার্ট পরার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

মন্ত্রীদের সুট-টাইয়ের পরিবর্তে হাফশার্ট পরতে এবং মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের সংসদ কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে শেখ হাসিনা এ পরামর্শ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।


সূত্র জানায়, বৈঠকের শেষে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, 'এখন গরমকাল, আপনারা সুট-টাইয়ের পরিবর্তে হাফশার্ট বা টি-শার্ট পরতে পারেন।' বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, 'গরম কাপড় পরলে এয়ারকন্ডিশন বেশি ব্যবহার করতে হয়। ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় হয়। তাই বিদ্যুতের অপচয় না করে আপনারা গরমে হাফশার্ট ব্যবহার করুন।' পাশাপাশি শেখ হাসিনা এয়ারকন্ডিশন মেশিন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ব্যবহার না করার নির্দেশনাও দেন মন্ত্রীদের।
বর্তমানে বিদ্যুৎ সংকটে দেশব্যাপী ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। বিদ্যুৎ ঠিকভাবে না পাওয়ায় পানির সংকটও তীব্র হচ্ছে শহরাঞ্চলে। বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অসন্তুষ্ট ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরাও। গত রবিবার সংসদ অধিবেশনে বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এর জন্য পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে দলের ভরাডুবির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। বিদ্যুতের কারণে যাতে মহাজোটের ভরাডুবি না হয় সে জন্য সরকারের প্রতি এখনই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান সরকারদলীয় এমপিরা। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিনিয়ত দুষছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টাকে। এ অবস্থার মধ্যে মন্ত্রীদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার এই নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া শেখ হাসিনা মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের সংসদে আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি অধিবেশন চলাকালে ও অন্যান্য সময়ে মন্ত্রীদের সব কাজ ফেলে সংসদে যোগ দেওয়া এবং সংসদ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়ানোর নির্দেশ দেন। এর আগে রবিবারও সংসদে এমপিদের উপস্থিতি বাড়াতে হুইপদের নির্দেশ দেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সংসদ অধিবেশনে ও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিয়মিত অংশ না নেওয়ায় সংসদ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিকল্প নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তাঁর সাম্প্রতিক সুইডেন সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করার সময় প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে সুইডেনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয় উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এভাবে বাংলাদেশেও সম্ভব কি না তা জানতে চান তিনি।
জবাবে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে বলে মন্ত্রিসভাকে জানান।
পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বেতন বাড়ছে : এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের বেতন-ভাতা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমান এবং পিএসসির সদস্যদের বেতন-ভাতা সচিবের সমান করে 'দ্য মেম্বার্স অব দ্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন অব সার্ভিস) (সংশোধন) আইন ২০১২'-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, সংশোধিত প্রস্তাবে পিএসসির চেয়ারম্যানের বেতন ৪৫ হাজার টাকা এবং সদস্যদের বেতন ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এত দিন যে পদ থেকে আসতেন, সেই পদের বেতন-ভাতা ভোগ করতেন। এ কারণে সাংবিধানিক পদ হিসেবে পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যস্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। খসড়া আইনটি সংসদে উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এ ছাড়া বৈঠকে প্রতিবছর ২ অক্টোবর 'জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস' এবং ২ জানুয়ারি 'জাতীয় সমাজসেবা দিবস' নামে আরো দুটি দিবস পালনের প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করে 'পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক (চাকুরির শর্তাবলী) আইন'-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অধ্যাদেশ আকারে জারি করে এটি কার্যকর করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে অধ্যাদেশটি আইন হিসেবে পাস করার জন্য উপস্থাপন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের জন্য গঠিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন চার হাজার ১৫০ টাকা মূল বেতন ধরা হয়েছে। মন্ত্রিসভার এ অনুমোদনের ফলে শ্রমিকরা ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন কাঠামোতে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য প্রান্তিক সুবিধা পাবেন। তবে এসব সুবিধা তাঁদের দেওয়া হবে চার কিস্তিতে।
শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের প্রথম কিস্তি পাবেন আগামী সেপ্টেম্বর মাসে, দ্বিতীয় কিস্তি আগামী ২০১৩ সালের মার্চে, তৃতীয় কিস্তি একই বছরের জুলাইয়ে এবং চতুর্থ কিস্তি ডিসেম্বরে পাবেন।
মূল বেতন ছাড়াও মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৭০০ টাকা, টিফিন ১৫০ টাকা, ধোলাই ভাতা ১৫০ টাকা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা, দুটি উৎসব ভাতা ও গ্র্যাচুইটিসহ কাঠামো অনুযায়ী অন্যান্য সুবিধা পাবেন শ্রমিকরা।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত 'ভিসা অব্যাহতি' চুক্তিতেও অনুসমর্থন দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালের আগস্টে স্বাক্ষরিত এ চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক এবং সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা ভিসা ছাড়াই দুই দেশ সফরের সুযোগ পাবেন।

No comments

Powered by Blogger.