একটি সীমান্তবিহীন আরব প্রজাতন্ত্র কি সম্ভব? by গাজীউল হাসান খান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহু আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে খণ্ড খণ্ড আরব রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভৌগোলিক সীমারেখা নির্ধারণের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। এর পেছনে ছিল তৎকালীন দুই প্রধান ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক পরাশক্তি_ব্রিটেন ও ফ্রান্স।


তখন তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ফায়দা আদায় করা এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই সে অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বজায় রাখা। অপরদিকে অটোমান শাসনের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের মুখে মুসলিম শাসন ভেঙে দেওয়া। মুসলিম বিশ্বে তখন তুর্কি, পারসিক ও আরবদের মধ্যে একটি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছিল। সে অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এবং ইতিমধ্যে খিলাফত কিংবা অটোমান শাসনের অবসান ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে ব্রিটেন তার ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মধ্যপ্রাচ্য বা আরববিশ্বসহ আফ্রিকা মহাদেশে তা আবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জারি করার চেষ্টা করেছে। ফ্রান্সও মূলত একই ধারা বা কৌশল অবলম্বন করে ব্রিটেনের সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছিল। তাই তারা উভয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে পাউরুটি বা কেকের টুকরোর মতো অতি যত্নে চারকোনা করে কেটে ভাগ করেছে আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর ও সুদানকে। আফ্রিকার মানচিত্রের দিকে তাকালেই সোজাসুজিভাবে কেটে ভাগ করা সেই বিভিন্ন দেশের অবস্থানের ওপর নজর পড়বে। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের অবস্থাও প্রায় অভিন্নই হয়ে উঠেছিল। সৌদি আরব, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাকের মানচিত্রেও তার অনুরূপ প্রতিফলন ঘটেছে।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অটোমান শাসন স্থায়ী হয়েছিল মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত। সে যুদ্ধে অটোমানরা অস্ট্রিয়া, জার্মানি কিংবা কেন্দ্রীয় (অক্ষ) শক্তির পক্ষে যোগ দিয়েছিল, ফলে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময় ব্রিটিশ ও ফরাসিরা কথিত অঞ্চলটিতে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করেছিল। অটোমানরা আফ্রিকার সর্বপশ্চিমের প্রদেশ মরক্কো এবং উত্তরাঞ্চলের ত্রিপোলিসহ লিবিয়ার অধিকাংশ এলাকাও আগেই হারিয়েছিল ফরাসি ও ইতালীয়দের কাছে। তবে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে মুক্ত করা ফিলিস্তিনের অধিকাংশ অঞ্চলকে ১৯১৬ সালে সম্পাদিত 'সাইকস-পিকট চুক্তির' অধীনে সরাসরি ব্রিটিশ কিংবা ফরাসি ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণে দেখানো হয়নি। বরং সে অঞ্চলকে মূলত লিগ অব ন্যাশনসের অধীনে একটি আন্তর্জাতিক জোন বা এলাকা হিসেবে দেখানো হয়েছে। 'ব্যালফোর ঘোষণা' (Balfour Declaration) হচ্ছে দুটির মধ্যে একটি প্রধান দলিল, যা মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক ইতিহাসকে আকৃতি দিয়েছে। ১৯১৭ সালে স্বাক্ষরিত ব্যালফোর ঘোষণায় বেরিয়ে আসে চারদিকে আরব অধ্যুষিত ফিলিস্তিনে 'ইহুদি রাষ্ট্র' ইসরায়েল। অন্যটি হচ্ছে ১৯১৬ সালে ঘোষিত 'সাইকস-পিকট চুক্তি' (Sykes-Picot Agreement), যা যুদ্ধপরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যে তিন প্রধান মিত্রশক্তি_ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার শাসিত রাশিয়া তাদের পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে গোপনভাবে প্রণয়ন করেছিল। তখন স্যার মার্ক সাইক ছিলেন ব্রিটিশ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি। তিনি এবং ফ্রান্সের পক্ষে কূটনীতিক এম জর্জেস পিকট সে চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলেন; কিভাবে তারা ভেঙে যাওয়া অটোমান শাসিত আরব প্রদেশগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে। পরিহাসের বিষয়, তৎকালীন আরব বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত অংশ, যা আজকের সৌদি আরব ও ইয়েমেন, তারা সে চুক্তি অনুযায়ী স্বাধীনতা পেয়ে যায় সবার আগে। আর সবচেয়ে অগ্রসর ও পরিণত অঞ্চল_লেবানন ও সিরিয়া চলে যায় ফ্রান্সের শাসনের অধীনে এবং অপরদিকে ব্রিটেন লাভ করে ইরাক ও ট্রান্স জর্ডান। ফিলিস্তিনের ভাগ্য পরে নির্ধারণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রশাসনের অধীনে ফেলে রাখা হয়েছিল। সে দলিলপত্র রাশিয়ার বলশেভিক সরকার পরে ফাঁস করে দিয়েছিল। ফিলিস্তিনের অধিকার ও মুক্তির প্রশ্নে ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরব ও ইসরায়েলিদের মধ্যে চারটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর ও সুদান বিভক্তিকালে ব্রিটিশ, ফরাসি ও অন্যরা সে অঞ্চলের আরব জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবিকা, যোগাযোগব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকিয়ে দেখেনি। তারা দেখেছে তাদের উপনিবেশবাদী স্বার্থ। সুতরাং আরবদের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে বিভিন্ন রাষ্ট্র গঠন ও তাদের স্বার্থের প্রশ্নে নির্মমভাবে সীমানা নির্ধারণ করে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফলে একদিকে তারা হারিয়েছে তাদের হাজার বছরের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বৃহত্তর জাতিগত সম্প্রীতি এবং অপরদিকে সৃষ্টি করা হয়েছে খণ্ডিত তথাকথিত রাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা ও অন্যান্য স্বার্থ নিয়ে রক্তক্ষয়ী বিরোধ। ১৯১৬ সালে স্বাক্ষরিত সাইকস-পিকট চুক্তি-পূর্ব মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রের দিকে তাকালেই মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আরব বিশ্বের একটি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত অবস্থান ধরা পড়বে। তুরস্ক ও পারস্য বাদ দিলে খলিফাদের শাসিত মুসলিম বিশ্বের বাদবাকি সব অঞ্চলই ছিল আরবি ভাষাভাষী আরব উপদ্বীপের অংশ। অটোমানদের শাসনকালেও আরব প্রদেশগুলোকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে। কিন্তু পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা (ব্রিটেন ও ফ্রান্স) তা ভেঙে দিয়েছিল। ফলে উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে পশ্চিম মরক্কো পর্যন্ত দেখা দেয় অসংখ্য সীমান্তরেখা ও বিভেদ। তাতে বৃহত্তরভাবে আরব জনগণের চেয়ে পরবর্তী পর্যায়ে প্রভাবশালী আরব ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থেরই প্রতিফলন ঘটেছে বেশি। কারণ, তারা খিলাফতের পরিবর্তে সেখানে গড়ে তুলেছিল রাজতন্ত্র কিংবা একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। একসময় সিরিয়ার দামাস্কাস নগরী থেকে মদিনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল হেজ্জাজ রেলওয়ে। হজব্রত পালনকারী হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর অবাধে ও অতি অল্প সময়ের মধ্যে চলে যেতে পারত মদিনা থেকে মক্কা নগরীতে। ছিল না কোনো পাসপোর্ট-ভিসার দিগদারি। পরবর্তী পর্যায়ে খণ্ডিত বিভিন্ন রাষ্ট্রে আরব শাসকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে দেখা দেয় রেষারেষি ও বিভেদ। বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া সে ঐতিহাসিক রেলপথের ক্ষয়িষ্ণু রেললাইনের অস্তিত্ব সিরিয়ার রাজধানীতে এখনো খুঁজে পাওয়া যাবে। ভেঙে যাওয়া খেলাফতের নব্য স্বাধীনতা পাওয়া আরব রাষ্ট্রগুলোতে শুরু থেকেই দেখা দিয়েছিল নানা বিশৃঙ্খলা। বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে শাসকদের, বিশেষ করে রাজতন্ত্রের দিকে যাওয়া রাষ্ট্রগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে মিসর ও লিবিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া সিরিয়া ও ইরাকে গঠিত হয়েছিল বিপ্লবী সরকার।
সে অবস্থায়ও আরবদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং সে অঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। গড়ে তোলা হয়েছিল নানা সংগঠন। আরব বিশ্বের নেতারা ২২ সদস্যবিশিষ্ট 'আরব লিগ' এবং ছয় সদস্যবিশিষ্ট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) গঠন করেছিলেন, তাঁদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করার জন্য এবং পাশাপাশি সেসব সংগঠনের মাধ্যমে সে অঞ্চলে রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং জোরদার করার জন্য বিভিন্ন বৃহত্তর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ১৯৫৮ থেকে মিসরের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তৎকালীন তরুণ নেতা জামাল আবদেল নাসেরের নেতৃত্বে প্যান আরব জাতীয়তাবাদী কর্মকাণ্ড আরেক নতুন ধারার সূচনা করেছিল। সে জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট নাসের তাঁর প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য স্থাপনের প্রচেষ্টায় ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি মিসর ও সিরিয়া এবং কিছুটা পরবর্তী সময়ে ইরাককে নিয়ে 'ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক' (ইউএআর) গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। ইয়েমেন আরব রিপাবলিকও তাতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তা ছাড়া পর্যায়ক্রমে লিবিয়া এবং সুদানও সে বিষয়ে উৎসাহ ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু তখন সিরিয়ার ওপর এক অর্থনৈতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিল। এ ছাড়া ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের আরব-বিরোধী চক্রান্ত ও যুদ্ধ বাধানোর ফন্দি-ফিকির ১৯৬১ সালের দিকে নাসেরের সে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক গঠনের বৃহত্তর পরিকল্পনা বা উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
প্রেসিডেন্ট নাসেরের পর তার 'প্যান-আরব মুভমেন্ট' বা আরব জাতীয়তাবাদী উদ্যোগ অনেকটা থেমে গিয়েছিল বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে ইসলামিক আন্দোলনের কারণে। মিসরেই সে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের জামানায়। সিনাই এলাকার ইসরায়েলি দখলকৃত ভূমি ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে মিসরের একক চুক্তিকে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ছুরিকাঘাত বলে বিবেচনা করেছিল আরবরা। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়া, সুদান, ইয়েমেন ও সিরিয়ার অভ্যন্তরেও ইসলামী আন্দোলন বেশ কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। তা ছাড়া ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর শিয়া অধ্যুষিত ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরানের গণআন্দোলন সমাজের অত্যন্ত গভীরে পরিবর্তনের একটি ভিন্ন অনুভূতি যোগ করেছিল। সে সময়টিতে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড এবং আলজেরিয়ায় ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট তাদের নিজ নিজ দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের দেশে স্বৈরশাসকদের দলন-পীড়ন ও পশ্চিমা নয়া সাম্রাজ্যবাদীদের ইসলামভীতির কারণে সে আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করতে পারেনি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের আন্দোলন শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিগত ১০ বছরে তাদের আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তিত হয়েছিল অত্যন্ত অভিনব কায়দায়। উলি্লখিত দুটি দেশ এবং আরব বিশ্বের অনেকেই এখন মনে করে, তাদের দেশ থেকে সবার আগে অগণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। নতুবা আরব বিশ্বে কখনোই গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে না। আর একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া সেখানে কোনো সংস্কার অথবা পরিবর্তনই সম্ভব নয়। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বুদ্ধিজীবী মহল, গণমাধ্যম এবং বিশেষ করে যুবসমাজ মনে করে, সমগ্র আরব জাতির স্বার্থ এক এবং অভিন্ন। তাদের সম্পদের সদ্ব্যবহার, শিক্ষা-দীক্ষা, জীবনের মানোন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য সবার আগে চাই জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। একমাত্র আরব জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমেই তা সম্ভব হতে পারে বলে তারা মনে করে। মুসলিম ব্রাদারহুড বর্তমানে মোবারক-পরবর্তী মিসরে এবং স্যালভেশন ফ্রন্ট আলজেরিয়ায় আবার সোচ্চার হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক সংস্কার ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, যার প্রভাব অপরাপর ছোট-বড় আরব রাষ্ট্রগুলোতেও পড়তে বাধ্য। তিউনিসিয়া ও মিসরের গণআন্দোলনের জোয়ার যেমন বাহরাইন, ইয়েমেন, ওমান ও লিবিয়ায় আঘাত হেনেছে; তেমনি তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সিরিয়া এবং এমনকি জর্ডান ও সৌদি আরবেও। গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সর্বস্তরে জনগণের প্রতিনিধিত্বের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সবাই। এ আন্দোলনে নারী সমাজও পিছিয়ে নেই।
আজকের বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবী যখন ক্রমশ আরো ছোট হয়ে আসছে, তখন মধ্যপ্রাচ্যের আরবদের মধ্যে শাসক শ্রেণীর স্বার্থে সৃষ্ট সীমান্ত উঠিয়ে দেওয়া কিংবা মুছে ফেলা দুঃসাধ্য হবে কি? অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের জনগণ গঠন করেছিল উত্তর আমেরিকায় একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। তেমনি কিছুটা ভিন্ন কাঠামোয় হলেও ইউরোপের ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন দেশ গঠন করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। অতীতে যা ছিল অসম্ভব, তা আজ সম্ভব হচ্ছে মানুষের স্বার্থেই। স্বৈরশাসকদের হাতে মিসর, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ইয়েমেন ও ওমানের জনগণ অতীতে যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রবঞ্চনার শিকার হয়েছে; তার প্রকৃতি ও ধরন একই। সে অঞ্চলের জনগণের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাস প্রায় একই। সুতরাং তাদের মধ্যে এ বিভেদের দেয়াল টিকিয়ে রাখা কার স্বার্থে? ইউরোপীয় অভিন্ন বাজার ও মুদ্রাব্যবস্থার মতো আরব জগতেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। এবং ক্রমেই সেখানে অন্যান্য আরব রাষ্ট্র এসে যোগ দিতে পারে। সে অবস্থায় তাদের একটি অভিন্ন পাসপোর্টও চালু করা সম্ভব হবে। আরব তরুণ সমাজ বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার চায়। পাশাপাশি শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে চায় দ্রুতগতিতে। তারা চায় সব অপশাসন, শোষণ, বৈষম্য ও দুর্নীতির উচ্ছেদ ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলতে এবং সে অঞ্চলের সম্পদকে জনগণের স্বার্থে কাজে লাগাতে। আর এর মধ্য দিয়েই আরব জাতি পেতে পারে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gayiulkhan@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.