এখনো এই মহানগর গণবিধ্বংসী মৃত্যুফাঁদ হয়ে আছে-নিমতলীর দুই বছর পর

ধন্য আমাদের সহনশীলতা! ঢাকার নিমতলীতে আগুনে বীভৎসভাবে পুড়ে ১১৭ জন মানুষের মৃত্যু থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। সেই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পরও সেখান থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানা এবং গুদামগুলো সম্পূর্ণ অপসারিত হয়নি।


এ রকম হতাশার মধ্যেই পালিত হলো পুরান ঢাকার নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দ্বিতীয় বার্ষিকী। ব্যক্তি-মানুষ খুন হলে খুনি হয় পালিয়ে বেড়ায়, নয়তো বিচারে শাস্তি পায়, কিন্তু গণমানুষের মৃত্যুর কারণগুলো উপেক্ষিতই হয়। নিমতলীর ঘটনার শিক্ষা এটাই বললে কি ভুল বলা হয়?
খবরে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুদাম ও কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা না থাকার জন্য জরিমানা করেছেন। গুদাম সেখানে অজস্র এবং বেশির ভাগই অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জামহীন। কিন্তু নিমতলীর বেলায় প্রশ্নটা গুদামে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা থাকা না-থাকা নিয়ে নয়। আবাসিক এলাকায় এ রকম দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের গুদাম রাখা নিষিদ্ধ করতে হবে। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর এ বিষয়ে কোনো গড়িমসিই সহ্য করার কথা নয়। কিন্তু সরকার যা কাঙ্ক্ষিত, তা করেনি। সহসাই অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুদাম সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে অজুহাত দেওয়া হয়। তাহলে কি সহসাই আরেকটি অগ্নিকাণ্ড নিভিয়ে ফেলা সম্ভব? তা যদি না হয়, তাহলে কি আরও শতাধিক মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনায় সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই?
অগ্নিকাণ্ডে যে প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংস হয়, তা কোনোভাবেই উপেক্ষার যোগ্য নয়। গত বছর দেশে ১৫ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর ২৩ শতাংশ চুলার আগুন, ১০ শতাংশ সিগারেট ও ৪৩ শতাংশের জন্য বৈদ্যুতিক গোলযোগ দায়ী। এই কারণগুলো একেবারে দূর করা না গেলেও কমিয়ে আনা কি সত্যিই অসম্ভব? এটুকু করার জন্য কোনো দক্ষযজ্ঞেরও প্রয়োজন পড়ে না। সরকারি পর্যায়ে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এবং ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে সচেতনতাই অনেক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু আমাদের সম্মিলিত উদাসীনতা এতটাই আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে যে সামনের অতল খাদটি কেউ আগাম দেখছে না।

No comments

Powered by Blogger.