সমস্যাপীড়িত জনজীবন by মযহারুল ইসলাম বাবলা

জনজীবন নানামুখী সংকটে নিপতিত। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংকট প্রকট রূপ নিয়েছে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পরিকল্পক বা নির্ধারক দলীয় সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী কেউ নন। মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা সাবেক আমলা। অভিযোগ উঠেছে, তিনি আবাসিক গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে সাধারণ ভোক্তাদের সীমাহীন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।


নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিশ্চিত না করে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরোপ করেছেন শর্তের ফাঁদ। আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনেরও কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। জনস্বার্থ বিবেচনা না করে কিছু সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন ঢালাও ব্যবসার সুযোগ_এ অভিযোগও আছে। সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়বহুল কিন্তু প্রাপ্তি নগণ্য। গ্রাহকের মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ বিদ্যুৎ সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলের মাধ্যমে সংগ্রহ করা সম্ভব। বাকি ৯৮ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি। অথচ এই নগণ্য ২ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে বিনিয়োগ করতে হবে বিপুল অঙ্কের টাকা। সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ আবাসিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে তা অসম্ভব। দেড় থেকে তিন লাখ টাকা সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনে বিনিয়োগ করার আবাসিক গ্রাহক পাওয়া যাবে না মনে করেই কি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে বিদ্যুৎহীন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে?
বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তিতাস গ্যাস ও ডেসাকে কম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। ডেসা কম্পানি হওয়ার পর সেবার মান হ্রাস পেয়েছে কিন্তু তাদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা পুষ্ট হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিদ্যুৎবিহীন আমরা সম্পূর্ণ অচল। দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল, আছে এবং থাকবেও। সে জন্য আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ-বঞ্চিত করে কি বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ সম্ভব? রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে অপ্রয়োজনীয় স্থাপনায় যথেষ্ট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। সেদিকে নজর না দিয়ে সাধারণ আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ-বঞ্চিত করার চিন্তা বিস্ময়কর। পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতা সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করেছে_এ অভিযোগও যথেষ্ট পুষ্ট। একজন আবাসিক গ্রাহক তার একতলা বাড়ি দোতলা করতে গিয়ে বা বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করলে নির্মাণকাজ চলাকালে গ্রাহকের নির্মাণ বিল প্রদানের নিয়ম। যার প্রতি ইউনিটের মূল্য ১৩ টাকা। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর নির্মাণ বিল বন্ধের আবেদন করলে বলা হচ্ছে নতুন সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির আবেদন করতে। নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির আবেদন করলে বলা হচ্ছে নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধি সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ।
গ্রাহকের নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহককে নির্মাণ বিল অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি চার টাকার স্থলে ১৩ টাকা প্রদান করতে হবে। না করলে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি। এটা বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত, না পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির স্বেচ্ছাচারিতা তা মানুষ জানতে চায়।
গ্যাসের আবাসিক সংযোগ-চুলা বৃদ্ধি বন্ধ রয়েছে। আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসবঞ্চিত করলেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যে গ্যাস সরবরাহ থেমে নেই। ঘরের বাইরে যানজটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা এবং নাকাল নাগরিক জীবন। জনগুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে দায়িত্বশীলদের তেমন কোনো ইতিবাচক ভূমিকা না থাকলেও সাধারণ মানুষের আবাসিক বিদ্যুৎ-গ্যাস প্রাপ্তি বন্ধ করে এক বৈষম্যপূর্ণ নাগরিক জীবনের সূচনা করেছেন। আর্থিক ও মানসিক ধকল অতিক্রম করে একজন মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয় এবং ব্যাংক-আর্থিকপ্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও কেবল গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ না পাওয়ায় নিজের বাড়িতে বসবাস করতে পারছেন না। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় সুদ-দায় বেড়েই চলেছে। নিজের বাড়ির কিছু অংশের ভাড়ার টাকায় যারা ঋণের কিস্তি পরিশোধের স্বপ্ন দেখেছিল, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিস্তি পরিশোধের তাগিদপত্রের চাপে তারা দিশেহারা। স্বীকার করছি, বর্তমান সরকারের অনেক সাফল্যের নজির আছে। তবে ঃগত দুই বছরে প্রশ্নবিদ্ধ কাজের তালিকাও কম দীর্ঘ
নয়। সরকারের অর্জনগুলো আড়াল করার ক্ষেত্রে এসবই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের আবাসস্থলে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের দায় সরকার এড়াতে পারবে না। দ্রুত আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলো পরিহার করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা নিরসনে সরকার ঃ
কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের ইমেজ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে_তেমনটিই সাধারণ মানুষ আশা করে। এ সরকার কতগুলো অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসেছে। তাই তাদের কাছে জনপ্রত্যাশাও বেশি।
লেখক : প্রাবন্ধিক

No comments

Powered by Blogger.