বিএনপির ১১ জুনের সমাবেশ-এক দফা ঘোষণা ছাড়া কঠোর কর্মসূচি নেই by মোশাররফ বাবলু ও শফিক সাফি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে সরকারকে বেঁধে দেওয়া বিএনপির ৯০ দিনের আলটিমেটাম ১০ জুন শেষ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে পরের দিন ঢাকার সমাবেশ থেকে একই দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।


তবে দাবি আদায়ে এ মুহূর্তে হরতাল বা অবরোধের মতো কঠোর কোনো কর্মসূচি থাকছে না। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
তবে সিদ্ধান্তে শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন আসতেও পারে। বিএনপির বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, ১১ জুনের সমাবেশের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতা ও জোটের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি না দিয়ে দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখা হলে কর্মসূচি ভিন্ন হবে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামনে রমজান মাস এবং বর্ষা মৌসুম। আন্দোলন করা কঠিন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করতে যাচ্ছে দলটি।
সূত্র মতে, ১১ জুনের সমাবেশে জুন ও জুলাই মাসে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে উপজেলা-থানা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের দুর্ভোগের ইস্যু সামনে এনেও কর্মসূচি থাকতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, 'সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করবে আমাদের কর্মসূচি কত কঠোর হবে। তারা যদি এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেয় সেক্ষেত্রে কর্মসূচি হবে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে। আর না মেনে নিলে এক দফার ঘোষণাসহ মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি আসবে।'
কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ১১ জুন শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ থেকে এক দফার দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তবে হটকারী কোনো সিদ্ধান্তে যাবে না বিএনপি। দাবি মেনে নেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়নি। কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ১১ জুনের দু-একদিন আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত ১২ মার্চের মহাসমাবেশ বানচালে সরকার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু মহাসমাবেশ ঠিকই সফলভাবে শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আগামী ১১ জুনের সমাবেশও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে চাই। আশা করি সরকার বাধা দেবে না।' কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এখনো চূড়ান্ত হয়নি'।
এবারে 'চলো চলো ঢাকা চলো' এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে যাঁরা আসতে পারবেন তাঁদেরই কেবল সমাবেশে অংশ নিতে বলা হয়েছে। তবে দলের হাইকমান্ড ঢাকা মহানগরী বিএনপি ও ঢাকার আশপাশের ছয় জেলার নেতা এবং ১৮ দলীয় জোট নেতাদের জোরালো অংশগ্রহণ আশা করছে। এ লক্ষ্যে গত রবিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়া ঢাকার আশপাশের ছয়টি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বৈঠকে ১১ জুনের সমাবেশকে মহাসমাবেশে পরিণত করতে নেতাদের নির্দেশ দেন। গণসমাবেশ সফল করতে ৪০টি টিম সারা দেশে কাজ করছে।
রবিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইদুর আলম বাবুল, নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, মুন্সীগঞ্জের সভাপতি আবদুল হাই, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দল সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল।
তৈমূর আলম খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, '১১ জুনের সমাবেশ সফল করতে নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আমি বলেছি, ১ লাখ লোক আসবে নারায়ণগঞ্জ থেকে। ২০ হাজার এক দিন আগেই ঢাকায় থাকবে।'
এদিকে সমাবেশের অনুমতি পাওয়া গেছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, সমাবেশের স্থান এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। দুজনই জানান, পল্টন ময়দান, মানিক মিয়া এভিনিউ পাওয়া না গেলে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ হবে।
জানা যায়, সমাবেশ সফল করতে দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তরিকুল ইসলামসহ দলের সিনিয়র নেতারা। আজ ১৮ দলীয় জোট ও ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.