উদ্বাস্তু শিক্ষা রমরমা ব্যবসা by মনোজিৎ মিত্র

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্র আজ বাণিজ্যের আখড়া। যে কোনো জেলা শহরেই আজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যাই বেশি। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও আজ সরকারি বিদ্যালয়ের পরিবর্তে গড়ে উঠছে ব্যক্তি মালিকানাধীন নানা রকমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।


বিভাগীয় শহরে অবস্থা আরও প্রকট। ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি গলিতেই রয়েছে এ রকম অজস্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক পর্যায়েও একই অবস্থা বিরাজমান। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণই বেসরকারি, যা আবার সবচেয়ে দামি এবং রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও রয়েছে নানা ধরনের কোচিং ব্যবসা। ফলে দিন দিন শিক্ষা হয়ে পড়ছে ক্রয়সামগ্রী, অধিকারের প্রশ্ন হয়ে যাচ্ছে অবান্তর। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। হাতেগোনা কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর সেশনজট আক্রান্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সরকারি ব্যবস্থা, যা অপ্রতুল। ফলে গড়ে উঠছে একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে নিয়ম_ টাকা যার, শিক্ষা তার। তা ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষার ব্যয়ও অধিকাংশের নাগালের বাইরে। এখানেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই উচ্চশিক্ষার ব্যয় নির্বাহের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি কাজের সন্ধানে ছুটতে হয়।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতের সম্পূর্ণটাই এখন পরিচালিত হয় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দেশনা অনুযায়ী। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এখন বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারিকরণের নানা অপচেষ্টায় মত্ত। পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি খোলসে ইউজিসির কৌশলপত্র অনুযায়ী, দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। যার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যার ভিসি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় কমানোর দাবিতে এক আন্দোলনের সময় বলেছিলেন 'উচ্চশিক্ষা উচ্চমূল্যে কিনতে হবে'। প্রতিষ্ঠার সাত বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা। পরিবহন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। তারপরও এখানকার শিক্ষা ব্যয় যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ও নানা ফির নামে ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা মূলত সরকারি শিক্ষাবাণিজ্য কৌশলেরই অংশ।
শিক্ষাবাণিজ্যের বিস্তার এভাবে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এই ব্যয় বেড়ে চলা যেমন শিক্ষার সর্বজনীনতার পরিপন্থী, তেমনি দুর্বল রাষ্ট্রব্যবস্থারও পরিচায়ক। শিক্ষার পরিপূর্ণ বিকাশে এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তা হলে উচ্চশিক্ষা খুঁজে পাবে তার আপন ঠিকানা, বন্ধ হবে শিক্ষার রমরমা বাণিজ্য।

স শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.