বেহাল বিদ্যুৎ পরিস্থিতি-কেন এ অসহিষ্ণুতা?

মহাজোট সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ ভেবেচিন্তে কথা বলেন না। এ কারণে কখনও কখনও তাদের বক্তব্য অনভিপ্রেত বা অনাকাঙ্ক্ষিতও মনে হয়। দেশ ও দশের মঙ্গল এবং কল্যাণের কথা যারা ভাবেন, বিপুল জনসমর্থনে নির্বাচিত একটি সরকারের কাছে যাদের প্রত্যাশা অনেক, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।


শেষ পর্যন্ত ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতো বিশিষ্টিজনও এ কাতারে শামিল হলেন! তিনি খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা। দক্ষ প্রশাসক হিসেবে রয়েছে খ্যাতি। কিন্তু ভাড়াভিত্তিক বা রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করলেই তারা জ্ঞানপাপী, সরকারবিরোধী ও দেশদ্রোহী হবেন, এমন অভিমত মানা যায় না। মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি প্রকৃতই খারাপ ছিল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কোনো কিছুই না করায় পরিস্থিতির এতটা অবনতি হয়েছিল। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির ব্যর্থতার অভিশাপ থেকে বিদ্যুৎ খাতকে মুক্ত করতেই প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রচলিত ক্রয়নীতি অনুসরণ করে চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনা হলে যে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে, সে বিষয়ে সংশয় ছিল এবং 'দায়মুক্তির' বিল পাস থেকেই তা স্পষ্ট। বিবেকবান ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষই মনে করেছে, দ্রুত ফল পেতে হলে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়। সবার গভীর আস্থা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তারা মনে করেছে, তিনি দেশের মঙ্গল চিন্তা করেই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। যখন দেখা গেল, কেউ কেউ এ সুযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের চেয়েও আখের গুছিয়ে নিতে বেশি মনোযোগী, তখন তারা হতাশ হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের সময় লোডশেডিং_ এটা কে মেনে নেবে, বলুন তো? সবাই আশা করেছিল, যথাযথ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নেওয়া এ পদ্ধতি থেকে সর্বোচ্চ মাত্রার সুফল মিলবে। বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এর একটি কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া। অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিতও স্বীকার করেছেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার ইউনিট থেকে প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ মেলেনি। এটাও বলেছেন, বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণের হিসাবে সরকারের ভুল ছিল। কুইক রেন্টালের কারণে যে সরকারের কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ সীমিত প্রকল্প মালিকের পকেটে গেছে সেটাও তো সবাই মেনে নিচ্ছেন। এটাও সবাই দেখছেন যে, গত প্রায় সাড়ে তিন বছরে গ্যাস কিংবা কয়লাভিত্তিক একটি প্লান্টও নির্মাণ করা যায়নি। তাহলে রেন্টালের বোঝা দেশ কতদিন টানবে? বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়বে, এটা জানা কথা। সরকারের কাজ হচ্ছে, শুধু আজ বা কাল নয়, ১০-১৫ বছরও নয়, আরও দূরে কী চিত্র দাঁড়াতে পারে সেটা ভেবে পদক্ষেপ গ্রহণ। এ পথে চলতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। চলার পথে প্রয়োজনীয় সংশোধনও করে নেওয়া যায়। এ জন্য সবার মত শুনতে হয়, প্রয়োজনে গুরুত্ব দিতে হয়। এর পরিবর্তে অসহিষ্ণুতার প্রকাশ বাঞ্ছনীয় নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.