আবার ‘মেন ইন ব্ল্যাক’

পাক্কা ১০ বছর। মেন ইন ব্ল্যাক সিরিজের দ্বিতীয় ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০০২ সালে। ঠিক এক দশক পর মুক্তি পেল উইল স্মিথ অভিনীত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিনির্ভর কমেডি ছবি মেন ইন ব্ল্যাক থ্রি। সিরিজের প্রথমটি মুক্তি পেয়েছিল ১৫ বছর আগে। ১৫ বছর লম্বা সময়। সে দিনের ২৫ বছরের টগবগে যুবক এখন চল্লিশের চালশের নামতা গুনছে।


কিন্তু এত দিন বাদেও এতটুকু কমেনি এই সিরিজের জনপ্রিয়তা। ফলাফল, মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই টপ চার্টে মেন ইন ব্ল্যাক থ্রি। এই ছবি দিয়ে সিরিজের পরিচালক হিসেবে ফিরে এসেছেন ব্যারি সনেনফল্ড। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবেও প্রত্যাবর্তন হয়েছে স্টিফেন স্পিলবার্গের।
ছবির গল্পেই রয়েছে চমক। না হলে দর্শকদের এভাবে চুম্বকের মতো হলঘরে টানবে কেন? ছবির গল্পে দেখা যাবে, আন্তমহাজগতের ভিলেন বরিস দি অ্যানিমলে চাঁদে অবস্থিত জেলখানা লুনারম্যাক্সপ্রিজন থেকে পালিয়েছে। তার উদ্দেশ্য টাইম মেশিনে চেপে ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে ফিরে যাওয়া। কারণ, সেই মাসেই এমআইবি এজেন্ট ‘কে’ (টমি লি জোন্স) তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
নিউইয়র্ক শহরে একটি বিধ্বস্ত নভোযান আর একটি রেস্তোরাঁর ভগ্নদশা দেখে এজেন্ট কে বুঝতে পারে, বরিস পালিয়ে গেছে। কের অনুতাপ হয়, কেন প্রথম সুযোগেই বরিসকে মেরে ফেলেনি, শুধু গ্রেপ্তার করে এনেছিল। এদিকে নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হুট করে নিরুদ্দেশ হয় কে। ‘মেন ইন ব্ল্যাক’-এর সদর দপ্তরের সবাই কের কথা ভুলেও যায়। শুধু ভুলতে পারে না তার সঙ্গী এজেন্ট জে (উইল স্মিথ)।
বরিস যেহেতু অতীতে ফিরে গিয়ে ঘটনা পাল্টে দিতে চাইছে, এ কারণে বর্তমান সময়ের মধ্যে একটা তালগোল পাকিয়ে যায়। জেডের মৃত্যুর পর এজেন্ট ‘ও’ (এমা থম্পসন) এখন প্রধানের দায়িত্ব পালন করছে। এজেন্ট ও আর জে বুঝতে পারে, বরিস নিশ্চয়ই কিছু একটা করেছে ১৯৬৯ সালে ফিরে গিয়ে। অতীতে গিয়ে কেকে মেরে ফেলা মানে তার বানানো পৃথিবীর সুরক্ষাব্যূহ আর্কনেট শিল্ডের অস্তিত্ব না থাকা। অর্থাৎ পৃথিবীর সুরক্ষার স্বার্থেই বরিসকে থামানো জরুরি।
এজেন্ট কেকে বরিস যেদিন খুন করে, টাইম মেশিনে চেপে ঠিক এর এক দিন আগে গিয়ে অতীতে পৌঁছে যায় এজেন্ট জে। অর্থাৎ কেকে বাঁচাতে জের হাতে থাকছে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। সেই অতীতে গিয়ে আবার কের হাতেই গ্রেপ্তার হয় জে! জে এই ঝামেলা মিটিয়ে কেকে বোঝায় তার মিশনের উদ্দেশ্য। এবার দুজন মিলে বের হয় বরিসের সন্ধানে। বরিসও খুঁজছে কেকে। দুই পক্ষের মুখোমুখি সাক্ষাতে একটা সংঘর্ষ তাই অনিবার্য। কার জয় হবে—সেটাই দেখার।
মজার ব্যাপার হলো, মেন ইন ব্ল্যাক থ্রির গল্পটা দ্বিতীয় পর্বের শুটিং চলার সময়ই মাথায় এসেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ছবি প্রত্যাশিত ব্যবসা না করায় তৃতীয়টির আলো দেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। স্মিথ ভালো করেই বুঝতে পারছিলেন, সিরিজের টানা দুটো ছবির ব্যর্থতা মানে সিরিজটিরই মৃত্যু। আর তাই এবার কাহিনির গাঁথুনি হতে হবে জমজমাট। সাসপেন্সটাও জমিয়ে তুলতে হবে দারুণ!
উইল স্মিথ বলেন, ‘সিরিজের ভক্তদের হতাশ না করতেই এই লম্বা বিরতি। আমায় বয়স এখন ৪৩ বছর। আমি আর আগের মানুষটি নেই। এটা খুব তৃপ্তিদায়ক যে আমি এমন একটা ছবি বানিয়েছি, যেটা আট-নয় বছরের শিশুর কাছেও পৌঁছাচ্ছে। সায়েন্স ফিকশন ও কমেডি আমার ভালো লাগে। যখন ছোট ছিলাম, স্টার ওয়ারস (১৯৭৭) আমার ওপরও একটা প্রভাব ফেলেছিল। আমি একটা গল্প খুঁজছিলাম। এই ছবিতে আমরা অতীতে ফিরে গেছি, সত্তরের দশকে। সায়েন্স ফিকশন মানেও কিন্তু দারুণ একটা গল্প!’
এই ১০ বছরে অনেক কিছুই পাল্টেছে। চলচ্চিত্রজগৎ এখন ঢুকে পড়েছে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির দুনিয়ায়। মেন ইন ব্ল্যাক থ্রিও মুক্তি দেওয়া হয়েছে থ্রিডিতে। শুধু এই ছবি নয়, সামনে একের পর এক সিক্যুয়াল আসছে স্মিথের। হ্যানকক টু; আ, রোবট টু; ব্যাড বয়েজ থ্রি। তবে তিনি আপাতত উচ্ছ্বসিত, ক্ষণ গুনছেন আফটার আর্থ চলচ্চিত্রের মুক্তির অপেক্ষায়। পারসুইট অব হ্যাপিনেস আর কারাটে কিড-এর পর আবার ছেলে জাডেনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন তিনি।
জাডেন এরই মধ্যে নিজের অভিনয়-প্রতিভায় বুঝিয়ে দিয়েছে, মা-বাবার যোগ্য সন্তানই সে। গর্বিত বাবা স্মিথ আফটার আর্থ-এ জাডেনের অভিনয় দেখার পর মন্তব্য করেছেন, ‘এই ছেলের মধ্যে জনি ডেপের সব গুণ আছে। ও কখনো কত টাকা পেল, তা নিয়ে ভাবে না। ভাবে ছবির গল্প আর নির্মাণ নিয়ে। সত্যি এই বয়সে এতটা পরিণত মাথা অবিশ্বাস্য।’
 রাজীব হাসান
তথ্য: হলিউড রিপোর্টার

No comments

Powered by Blogger.