আবহাওয়াগত কারণেই অর্থবছর পরিবর্তন প্রয়োজন by আনু মুহাম্মদ

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা এলে অনেকে অর্থমন্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি নিয়ে কথা বলেন। বলা হয়, তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন? কারা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করল? সরকারই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। আমাদের এডিপি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না সরকারের পক্ষে।


আমি মনে করি, আমাদের অর্থবছর পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের এখানকার আবহাওয়াগত কারণে জুলাই-জুন অর্থবছর বাস্তবসম্মত নয়। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এই সময়টা মানা হয়। আমাদের এখানে পাকিস্তান আমলে এটা হয়েছে। সেই ধারাই এখনো চলে আসছে। অর্থবছরের কারণেও আমাদের এখানে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। মে-জুন মাসে বৃষ্টি থাকে প্রায় প্রতিবছর। এ সময় কাজ শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লাগতে হয়। কিন্তু আবহাওয়া থাকে প্রতিকূলে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি এপ্রিল-মার্চ অর্থবছর করা হয়, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। গ্রামীণ সমাজে বৈশাখ থেকে সময় গোনার ঐতিহ্য আছে। বৈশাখ থেকেই তাই আমাদের অর্থবছর করা যেতে পারে। এই অধিবেশনেই যাতে এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসে সেই প্রত্যাশা করি। এতে করে সরকারি অপচয় কমবে। শুধু তা-ই নয়, আমি মনে করি, এতে করে দুর্নীতিও কিছুটা কমে যেতে পারে।
সরকারের কিছু সাফল্য দেখা যায় সব সময়। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি সরকারই কমবেশি সাফল্য অর্জন করে থাকে। বিশেষ করে পরোক্ষ কর আদায়ের কথা বলা যেতে পারে। সীমিত আয়ের মানুষের কাছ থেকে যে কর আদায় করা হয়, সেখানেও সাফল্য আসে। কারণ, তারা দুর্বল। তারা সাধারণ মানুষ। অথচ সম্পদশালীদের প্রতি সরকার দুর্বল। দেশের সম্পদের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ কুক্ষিগত করে রেখেছে বিত্তশালী গোষ্ঠী। যদি ৫০ শতাংশও ধরা হয়, তাহলে এই সম্পদের পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকা। আশ্চর্যজনক হচ্ছে, তারা কিন্তু করের আওতার বাইরে থেকে যায়। সমাজের এই বিত্তশালীদের কাছ থেকে যথাযথভাবে যদি কর আদায় করা যায় তাহলে আমাদের অর্থনীতি অধিক গতি পাবে। কালো টাকা সাদা করার যে প্রবণতা তার চেয়েও উত্তম পথ হচ্ছে এটা। এডিপি বাস্তবায়ন আগের মতোই রয়ে গেছে। মে মাস পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৫০ শতাংশ। প্রশ্ন হচ্ছে, এডিপির অর্ধেকও যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে এত বেশি টাকা এডিপির জন্য বরাদ্দ করে লাভ কী? বেশি বরাদ্দ করে বেশি ঋণ নেওয়ারও প্রয়োজন কী? আমাদের আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে প্রকল্প বাছাই করার ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক ও পরিবেশগত দিক বিবেচনা করা হয় কম। এখানে প্রকল্প বাছাই করার সময় অগ্রাধিকার প্রদানের ব্যাপারে দক্ষতা পরিলক্ষিত হয় না। অন্যদিকে প্রকল্প বাছাইকালে ক্ষমতাবানদের প্রভাব কাজ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি কোনো পক্ষের স্বার্থও বিবেচনা করা হয়। আমাদের পাটশিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। সেদিকে আমরা কতটা খেয়াল দিয়েছি? দেশের বড় প্রয়োজন হচ্ছে রেলওয়ের উন্নয়ন। আমরা কি সেদিকে নজর দিতে পেরেছি? অথচ এসব খাতে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে পারলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বরাদ্দ বাড়ালে কিংবা অধিক হারে ভর্তুকি প্রদান করলেই উন্নতি হয় না। দুর্নীতির কারণে ব্যয় বাড়ে। সেই বর্ধিত ব্যয় নির্বাহ করার জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। এতে করে একটি গোষ্ঠী লাভবান হয় ঠিকই। রেন্টাল কিংবা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। এতে করে তো তেল আমদানি আরো বেড়ে যাবে। আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ বাড়াতে হবে। বাপেঙ্কে শক্তিশালী করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। সে খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো মেরামত করে কার্যক্ষম করতে পারলে কুইক রেন্টাল কিংবা রেন্টাল থেকে অনেক ভালো হবে।

গ্রন্থনা : মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.