ভারত ও পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র দৌড়ের পরিণতি কী?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রতিযোগিতা বেশ জমে উঠেছে। গত মঙ্গলবার পাকিস্তান অজ্ঞাত স্থান থেকে হাতফ-৭ (বাবুর) নামের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র রাডার ফাঁকি দিয়ে ৭০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দাবি।


গত ২৫ এপ্রিলের পর এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল পাকিস্তান।
এদিকে ভারত কাল বুধবার চালিয়েছে বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘আকাশের’ সফল পরীক্ষা। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ২৫ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি ৬০ কেজি পরিমাণ পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম বলে ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করছেন। এ ছাড়া গত কয়েক মাসেও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত।
এভাবে পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশই তাদের সামরিক কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত বাড়িয়ে যাচ্ছে। আর তা ঘটছে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো পারমাণবিক মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে একের পর এক তাদের নেওয়া কঠোর অবস্থানই এর জোরাল উদাহরণ। প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রতিযোগিতা শেষতক কোন দিকে গড়াবে? কিংবা এভাবেও প্রশ্ন রাখা যায়, এই পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের শেষ পরিণতি কী?
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) গবেষকেরা বলেন, পাকিস্তান বেশ কিছু নতুন স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে এসব পারমাণবিক অস্ত্র তারা ব্যবহার করতে পারে।
এসআইপিআরআই তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের আকার ও কার্যক্ষমতা বাড়াচ্ছে। উভয় দেশই নতুন ধরনের পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এবং তা যথাস্থানে মোতায়েন করছে। এভাবে তারা তাদের সামরিক উত্পাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নিউক্লিয়ার কমান্ড অথরিটির এক সভা ডাকেন। এতে স্থল, আকাশ ও নৌপথভিত্তিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
পাক-ভারতের পাঞ্জার লড়াই ভোল পাল্টেছে সত্তরের দশকে। শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি চলত গোপনে। প্রকাশ্যে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের পরীক্ষা, এই সাফল্যের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা ও প্রতিবেশীদের প্রতি হুঁশিয়ারি গত এক দশকে প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির বেলায় আগে ধারণক্ষমতা ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের দূরত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পেত। এখন সেখানে যোগ হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি ও সামরিক কাজে ব্যবহারে আরও কৌশলগত সক্ষমতা।
ভারত গত ১৯ এপ্রিল অগ্নি-৫ নামের একটি পারমাণবিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। এটি চীন ও পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। এর জবাবে ১০ মে পাকিস্তান হাতফ-৩-এর পরীক্ষা চালায়। এটি ২৯০ কিলোমিটার দূরত্বের বস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ২৯ মে পাকিস্তান হাতফ-৯ নামের আরও একটি অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এটি এক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তান একের পর এক যেভাবে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, মারণাস্ত্রের মজুত বাড়াচ্ছে, এতে দুই দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হয়তো বা জোরদার হবে। কিন্তু থেকে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে পুরোপুরি। তা কেবল ওই দুই দেশ, গোটা অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.