ইউপি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হবে না_বাংলাদেশে এটাই নিয়ম। স্বাভাবিক কারণেই এই নির্বাচনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রকাশিত সংবাদ দেখে মনে হয়, নির্বাচন প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত থাকছে না।


তাঁরা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নিজেদের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লিপ্ত হয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশন থেকে অভিযোগ কিংবা অনুরোধ করার পরও তাঁরা ঘরে ফিরছেন না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপি কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানদের এভাবে জড়িত হওয়ার কাজটি অবশ্যই নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। আর এমপিরা যদি কোনো নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তাহলে তা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এমপিদের এভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার কারণে প্রশ্ন উঠেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে নাকি? এমপির পছন্দের প্রার্থী যদি নির্বাচনে বিজয়ী না হন, তাহলে সেখানে কি এমপি বনাম ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে বিভাজন তৈরি হবে না? সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। এমপির পক্ষপাত নিয়ে প্রতিপক্ষ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগ আমলে আনার পরও কিছু করতে পারবে না_এটাও স্বীকার করতে হবে। কারণ নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করতে অনুরোধ করেছেন মাত্র। এতে করে কেউ যদি তাদের অনুরোধ রক্ষা না করে, তাহলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কারণ নির্বাচনী আইনে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। আচরণবিধি লঙ্ঘন না হলে কিংবা আইনের কোনো ধারায়ও যদি এই ধরনের কাজকে বাধা প্রদান না করে থাকে, তাহলে এমপি কিংবা দলীয় সিনিয়র নেতাদের এহেন কাজ থেকে বিরত করা সত্যিই কঠিন। এ অবস্থায় বিবেচনা বোধকেই কাজে লাগাতে হবে। এমপিরা বৃহত্তর পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও তাঁদের দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। তাই এমপি ও দলীয় সিনিয়র নেতারা যদি নিজ উদ্যোগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলেই সুন্দর হয়। অন্তত নির্বাচন শেষে যিনিই চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য নির্বাচিত হোন না কেন, তাঁর প্রতি আস্থা রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সহজ হবে। রীতি প্রথার কথাও যদি বলা হয় তাহলেও দেখা যাবে, বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অনেক সময়ই নেতা কিংবা এমপিরা ইউপি পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করেননি। সে কারণে নির্বাচন-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তেমন অসুবিধার সৃষ্টি হয়নি। তাই এমপি কিংবা প্রভাবশালী দলীয় নেতারা যাতে নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপ না করেন, এমন প্রত্যাশা সংগত কারণেই করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.