জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশা by আহমেদ সজল

দীর্ঘ অচলাবস্থার অবসান ঘটতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর সাংস্কৃতিক কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে সরকার অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে উপাচার্য পদ থেকে সরিয়ে নেয়। অবশ্য এর আগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।


আন্দোলনকারীরা অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ এনেছেন। বিভিন্ন বিভাগে গণনিয়োগসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজের ব্যানারে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছিল অনেক আগ থেকেই। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যার পরে। উঁচু-নিচু পথ মাড়িয়ে দীর্ঘদিনের আন্দোলন উপাচার্য পতনের এক দফার রূপ পরিগ্রহ করে। অনেকে এটাকে কতিপয় শিক্ষকের বা কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্দোলন বললেও এবারের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতাবোধ জাগ্রত করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সকাল-দুপুরে মিছিল-সমাবেশ করে ক্লান্ত শিক্ষার্থীরা হলে ফেরেনি কেউ। উপাচার্যের বাসভবনের সামনেই রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। বলে রাখা ভালো, এবারের আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল অভাবনীয়। উপাচার্যের অনিয়ম, সন্ত্রাস, প্রকৃতি বিনাশী তৎপরতায় অতিষ্ঠ ছিল প্রায় সবাই। আন্দোলনের একটি অধ্যায় অতিক্রান্ত হওয়ার পর নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। ৪০ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজ পরিবার থেকে উঠে এলে বরং ভালো হতো_ এ কথা নতুন উপাচার্য উপলব্ধি করেছেন। এ বিষয়ে সবার বেদনাবোধের প্রতি সম্মান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশা অনেক। প্রত্যাশার স্পর্ধা যেমনই হোক বরং সেগুলো যৌক্তিক হলে পূরণ করাই বাঞ্ছনীয়। নিশ্চয়ই উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কোনো পক্ষকে নিজের কিংবা পরের করে নেবেন না। সাংস্কৃতির কর্মকাণ্ড ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে সুখ্যাতি অতীতে ছিল, সেই হৃত গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে উদ্যোগের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। সন্ত্রাস লালনের যে সিলসিলা জারি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ আবিষ্কার জরুরি, এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রক্টরিয়াল বডি পুনর্গঠন। কারণ স্বয়ং প্রক্টরের উপস্থিতিতে তৎকালীন উপাচার্যপন্থি ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংস্কৃতিক কর্মীদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। শরীফ এনামুল কবিরের চারজন খলিফা ছিলেন বলে ক্যাম্পাসে জনশ্রুতি রয়েছে। এদের একজনের বিরুদ্ধে 'ভূমিহীনদের দলনেতা' হিসেবে পরিচয় জাহির করে অসহায় গরিব মানুষের পয়সা লুটে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। নিয়োগ বিষয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য সমাধান পেলে সবার জন্যই মঙ্গল। নিয়োগ পেয়েছেন এবং যারা অভিযোগ তুলেছেন সবাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগুরু। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন তোলা সমীচীন নয়। তুলনামূলক কম যোগ্যতায় যদি ভিন্ন পরিচয়ে শিক্ষক হওয়া যায়, তবে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মানহানিকর। নতুন উপাচার্য সব বিরোধাত্মক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেবেন বলেই বিশ্বাস করি।

স শিক্ষার্থী, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.