সড়কের ইট পর্যন্ত রক্ষা পাবে না?-‘নেতা’র ক্ষমতা

কারও বাড়ির দেয়াল থেকে ইট খুলে নিয়ে যাওয়া যেমন, জনগণের সম্পত্তি সড়ক থেকে ইট তুলে নেওয়া তেমনই এক অপরাধ। প্রকাশ্যে এবং স্থানীয় জনগণের আপত্তির মুখে সেই কাজটি নির্বিঘ্নে করেছেন বগুড়ার আওয়ামী লীগের এক নেতা।


পুলিশ সময়মতো আসেনি, প্রশাসনের লোকজন যথাসময় জানেনি, কিন্তু সাংবাদিক ঠিকই খবর পেয়েছেন। প্রথম আলোর চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় তোলা সড়কের ইট ছিনতাইয়ের সেই দৃশ্য শনিবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিতও হয়েছে। সত্যিই কী বিচিত্র আর বেপরোয়া সরকারি দলের ‘নেতার ক্ষমতা’!
নেতা, পুলিশ আর প্রশাসনের পরোক্ষ যোগাযোগে সরকারি সম্পত্তি লুণ্ঠনের আদর্শ দৃষ্টান্ত এই ঘটনা। নেতার দাবি, তিনি রাস্তার কাজটি করানোর ‘তদবির’ করেছেন বলে ইট-বাঁধানো সড়কের ইটে তাঁরই অধিকার। বলা বাহুল্য, সরকারি সম্পত্তি, যা সংবিধানে জনগণের সম্পত্তি বলে স্বীকৃত; এটাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো করে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার। ওই ‘নেতার’ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পদ লুণ্ঠন ও দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। পুলিশের দাবি, তারা ইটগুলো জব্দ করেছে। কিন্তু ঘটনার সময় তারা আসেনি কেন? আর ইটগুলো স্থানীয় আরেক ‘নেতার’ বাড়িতে রাখাকে কি আইনমাফিক জব্দ করা বলে? পুলিশ তবে কার হয়ে কাজ করেছে? প্রশাসন অপেক্ষা করছে, সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হলে তারা কিছু একটা করবে। এভাবেই অসাধু রাজনৈতিক শক্তি পুলিশ ও প্রশাসন তথা রাষ্ট্রীয় পক্ষকে নিষ্ক্রিয় করে রাখছে বা তাদের অপকর্মের অংশীদার করে তুলছে। পুরো ঘটনায় জনগণকে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে।
বগুড়ার গোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্দ্বিধায় যা বলেছেন, তা অনৈতিক হলেও অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ব্যয়, উন্নয়নকাজ প্রভৃতিতে রাজনৈতিক নেতারা হস্তক্ষেপ করবেন এবং সরকারদলীয় ক্ষমতার সুবাদে এসব থেকে একটা ফায়দা তাঁরা তুলবেন। এভাবে তাঁদের অনেকেই নিজেদেরকে এলাকার অনানুষ্ঠানিক জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছেন। পুলিশ ও প্রশাসনকে স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে এঁদেরই সহযোগিতা করে যেতে হয়।
সরকার যে ‘দিনবদলের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার মুখরক্ষার স্বার্থে হলেও ইট ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে মামলা করে বিচার করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.