পুলিশের নিরাপত্তাহীনতা গ্রহণযোগ্য নয়-আইনশৃঙ্খলার অবনতি

সন্ত্রাসীর গুলিতে পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর অনেক প্রশ্ন আর উদ্বেগ জাগায়। যাদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া, তারা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতার শিকার! এ কেমন করে হয়? বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর মতিঝিলে সন্ত্রাসীর গুলিতে পুলিশ কনস্টেবল মনজুরুল ইসলাম নিহত হওয়ার দুই দিন আগেই মঙ্গলবার রাতে


রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় বখাটে সন্ত্রাসীরা পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে একটি পিস্তল ছিনিয়ে নিয়েছে। সে পিস্তল এখনো উদ্ধার হয়নি। গত এপ্রিল মাসে বংশাল থানার এসআই গৌতম রায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। মে মাসে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহাসড়কের পাশে পাওয়া যায় রাজধানীর রমনা থানার এসআই মিজানুর রহমানের লাশ। জুলাই মাসে পাবনার ঢালারচরে চরমপন্থীদের গুলিতে নিহত হন পুলিশের তিন সদস্য। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন পুলিশের ২৩ জন সদস্য।
দুর্বৃত্তদের হাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির লক্ষণ; আর যখন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই এমন মৃত্যুর শিকার হন, তখন বলতে হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে। পথেঘাটে ডাকাতি বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ধামরাইয়ের কাছে একটি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের হাতে তিন ব্যক্তি নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে। রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বাড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে সেটা বিশেষ গুরুত্ব পায় না; বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বা তেমন কোনো অবনতি হয়নি-জাতীয় মন্তব্য করা হয়। কিন্তু খোদ পুলিশের সদস্যরা একের পর এক হামলা ও হত্যার শিকার হলে তাঁদের পক্ষে নিষ্ক্রিয় থাকা সম্ভব হয় না। পুলিশের মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা কেন হঠাৎ বেড়ে গেল, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশের দিক থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তত্পরতা নেই বলে পরিস্থিতি দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে; পুলিশ হত্যার মামলাগুলোর তদন্ত চলছে ঢিমেতালে, অধিকাংশ মামলার মূল আসামিরা ধরা পড়েনি। অর্থাৎ পুলিশের ওপর হামলা চালালে বা তাদের হত্যা করলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে—এমন ধারণা সম্ভবত দুর্বল হয়েছে। পুলিশ মেরেও দিব্যি পার পাওয়া যায়—সম্ভবত এমন বিশ্বাস জেগেছে দুর্বৃত্তদের মনে। তাই তারা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন অভিযোগ আছে যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রকাশ্য ব্যবহার, খুন, ছিনতাই ইত্যাদি হচ্ছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে। পুলিশের কিছু কর্মকর্তা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাগুলোতে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধার কথা উল্লেখ করেছেন।
সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আইন প্রয়োগের ব্যবস্থায় অনেক গভীর সমস্যা রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া আশু প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.