ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল-ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি by সাফায়েত আমিন

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও নির্বাচিত চারটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রিতম মুজতাহিদ ও সাফায়েত আমিন-এর নিরাপদ সড়কব্যবস্থা গড়ে তোলার বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ আরও তিনজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


টেলিভিশনে পরম আগ্রহে লন্ডনের রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি দেখছিলাম। পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম নামের একটি কক্ষ থেকে, যেখানে রয়েছে শত শত কম্পিউটার এবং আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি প্রযুক্তিনির্ভর এবং কার্যকর। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো গাড়ির সাধ্য নেই তাদের দৃষ্টির বাইরে যাওয়ার। আর রাস্তার নিচে সেন্সরবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে তারা আগে থেকেই যেকোনো ট্রাফিক জ্যাম হওয়ার আশঙ্কা বুঝতে পারে এবং তার আগাম নিয়ন্ত্রণও করে থাকে।
ডকুমেন্টারিটি দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হলাম এবং একই সঙ্গে নিজের দেশের কথা চিন্তা করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগেও আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয় ট্রাফিক পুলিশের হাতের দিকে। আরও বিস্ময়কর, আমাদের ট্রাফিক কন্ট্রোল অটো এবং ম্যানুয়াল—দুটোই একসঙ্গে চলে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমার মাথায় আসে না। অনেকেই বলে থাকে, আমাদের সড়কগুলোর আয়তন কম, তাই হয়তো ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে। কিন্তু আমার মনে হয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের চরম অবহেলা ও অনিয়ম, যার ফল আজকের এই ভয়ংকর ট্রাফিক জ্যাম। এ অবস্থায় ঢাকার রাস্তা দ্বিগুণ প্রশস্ত করে দেওয়া হলেও জ্যাম ও দুর্ঘটনা হয়তো লেগেই থাকবে শুধু আমাদের বদভ্যাসের কারণে।
আমরা অনেকেই আছি, যারা রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না, সিগন্যাল মানি না। আমাদের ফুটপাত হকার ও দোকানদারদের দখলে। আমরা দেখি, পুলিশ তাদের কিছু বলে না, কমিশন পায় বলে। ক্ষমতাসীন সরকারের পাতিনেতারাও নাকি বখরা পায়। আর নাগরিকেরাও পথে যেতে যেতে গৃহস্থালি বাজার শেষ করতে পারে বলে প্রতিবাদ করে না। পাশাপাশি যার যার ইচ্ছামতো রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে বাজার সেরে নেয়। ট্রাফিক পুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করে। কারণ, না জানি কোন ক্ষমতাশালী বিত্তবানের গাড়ি। শুধু শুধু ঝামেলায় কে জড়াতে চায়! পাশের দেশ ভারতেও রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থপনা ও আইন প্রয়োগ আমাদের চেয়ে উন্নত। আমরা কিন্তু প্রাথমিকভাবে তাদের এ ব্যাপারটি অনুসরণ করতে পারি।
সর্বশেষ উদাহরণটি আমাদের সম্মানিত রাজনৈতিক নেতাদের জন্য। সম্প্রতি লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী একটি জরুরি সভায় অংশ নিতে ব্যক্তিগত গাড়িবহর রেখে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান, তাঁর সঙ্গে ছিল শুধু একজন নিরাপত্তাকর্মী। অথচ আমাদের দেশের নেতারা ঠিক তার বিপরীত। নিজেরা দ্রুত চলাচল করতে অনেক সময় পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেন। আমরা যদি এসব বদলাতে না পারি, তাহলে সড়কে অপমৃত্যু ঘটবেই, আর যানজটমুক্ত রাস্তা আমরা হয়তো আর কখনোই দেখতে পাব না।
সাফায়েত আমিন: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক। safayetamin@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.