পবিত্র কোরআনের আলো-খ্রিস্টানরা একত্ববাদ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল

[সুরা আলে ইমরান (মাদানি) : আয়াত সংখ্যা ২০০
রুকুর সংখ্যা ২০]
বিস্মিল্লার্হি রাহ্‌মানির রাহিম
১. আলিফ লা-ম মীম।


২. আল্লা-হু লা-ইলা-হা ইল্লা-হুয়াল হায়্যিইউল ক্বাইঊম।
৩. নায্যালা আ'লাইকাল কিতা-বা বিলহাক্কি মুসাদ্দিক্বাল লিমা- বাইনা ইদাইহি ওয়া আনযালাত্ তাওরা-তা ওয়ালইনজীল।
৪. মিন ক্বাবলু হুদাল্ লিন্না-ছি ওয়া আনযালাল ফুরক্বা-না; ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ বিআ-ইয়া-তিল্লাহি লাহুম আ'যাবুন শাদীদ। ওয়াল্লাহু আযীযুন যুনতিক্বা-ম।
৫. ইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াখ্ফা- আ'লাইহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা- ফিচ্ছামা-য়ি।
৬. হুয়াল্লাযী ইউসাওয়্যিরুকুম ফিল আরহা-মি কাইফা ইয়াশা-উ; লা- ইলা-হা ইল্লা- হুয়াল আ'যীযুল হাকীম। [সূরা আলে ই'মরান, আয়াত : ১-৬]
অনুবাদ : রহমান রাহিম আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১. আলিফ-লাম-মীম। (এর অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন। এগুলো প্রতীকী শব্দ। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল ছাড়া এর অর্থ অন্য কেউ জানে না, জানার প্রয়োজনও নেই।)
২. মহান আল্লাহ, যিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।
৩. তিনি আপনার ওপর সত্যসহ কিতাব নাজিল করেছেন, যা আপনার আগে নাজিল করা সব কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে। তিনি তাওরাত ও ইঞ্জিল নাজিল করেছেন।
৪. মানব জাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য তিনি ইতিপূর্বে আরো কিতাব নাজিল করেছেন এবং হক ও বাতিলের মধ্যে ফারাক সৃষ্টিকারী মানদণ্ড অর্থাৎ কোরআন নাজিল করেছেন। তা সত্ত্বেও যারা আল্লাহর নির্দেশগুলোকে অস্বীকার করবে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ পরম ক্ষমতাশীল ও চরম প্রতিকার গ্রহণকারীও।
৫. অবশ্যই আল্লাহর কাছে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর কোনো তথ্যই গোপন নেই।
৬. তিনি তো সেই মহান সত্তা যিনি মায়ের জরায়ুতের তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন তাঁর ইচ্ছামতো। আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই। তিনি সর্বময় ক্ষমতাশালী ও পরম প্রজ্ঞাময়।
(সুরা : আলে ইমরান-আয়াত-১-৬)
ব্যাখ্যা : এই সুরার নাম শুরু আলে ইমরান। আলে ইমরান অর্থ ইমরানের বংশধর। ঈসা (আ.)-এর মা মরিয়ম (আ.)-এর বাবার নাম ইমরান (আ.)। তিনি নবী ছিলেন। ইমরানের বংশধর বলতে সাধারণত খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদেরই বোঝানো হয়। কারণ জন্মসূত্রে খ্রিস্টানদের পূর্বপুরুষ হজরত ইমরান (আ.)। এই সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়। মদিনায় ইহুদি এবং খ্রিস্টান দুই সম্প্রদায়েরই বসবাস ছিল। আর সেখানে কোরাইশদের অনুসারী পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। রাসুল (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পর ইহুদিদের পাশাপাশি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করার বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বাস্তব। সুরা বাকারায় ইহুদি সম্প্রদায়ের বিষয়ে আলোচনা এসেছে বেশি। সুতরাং পরবর্তী সুরা খুব যুক্তিসংগত কারণেই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষের নামে। এই সুরার শুরুতেই এসেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ।
উলি্লখিত আয়াতগুলো প্রধানত এসেছে একত্ববাদ বা তাওহিদের মর্মবাণী মানুষকে উপলব্ধি করানোর লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। ইহুদিদের মতো খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও আদিতে ছিল একত্ববাদী বা তাওহিদের অনুসারী। নবী ইমরান (আ.)-এর জন্মও ইহুদি সম্প্রদায়ে। কিন্তু ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় উভয়ের একত্ববাদ থেকে সরে গিয়ে আল্লাহর সঙ্গে নানান কিছুকে শরিক করতে থাকে এবং বিভিন্ন মাবুদের উপাস্য হয়ে ওঠে। খ্রিস্টান সম্প্রদায় তখন একত্ববাদ থেকে সরে গিয়ে ত্রিত্ববাদে উপস্থিত হয়। অর্থাৎ তারা আল্লাহর সঙ্গে মরিয়ম এবং তাঁর পুত্র ঈসাকে শরিক করে ফেলতে থাকে। তারা ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বলে অভিহিত করে। এ প্রেক্ষাপট থেকেই ওই আয়াতগুলো এসেছে। ৬ নম্বর আয়াতটির শানে নুজুল এ রকম : কয়েকজন খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদ একদিন রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে ধর্মীয় আলোচনা শুরু করে। রাসুল (সা.) একত্ববাদের মর্মকথাগুলো তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
খ্রিস্টানরা ত্রিত্ববাদ বা তিন প্রভুর ব্যাপারে তাদের যুক্তি তুলে ধরলেও রাসুল (সা.) সফলভাবে তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস খণ্ডন করে দিলেন। ফলে তারা একপর্যায়ে একত্ববাদের মূল কথা মানতে বাধ্য হলো। এ আয়াতে একত্ববাদকে উপলব্ধি করানোর লক্ষ্যে যুক্তিসহ কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়। প্রধান উদাহরণটি হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা মায়ের জরায়ুতে কিভাবে মানুষের জন্মের সূচনা করেন। এই উদাহরণ ও যুক্তি আল্লাহর ধারণা সম্পর্কে সত্যিকার উপলব্ধি জাগানোর মতো। আল্লাহর হাতে বিশ্বজগতের প্রকৃতি। তিনি অন্যান্য বিচ্ছিন্ন শক্তি বা শক্তিধরদের মতো নন। এই সত্য উপলব্ধি করলে আল্লাহর সঙ্গে কেউ কখনো শরিক করতে পারে না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.